শিক্ষায় অনেক সমস্যা, কারিকুলাম ‘লাস্ট সমস্যা’: ঢাবি অধ্যাপক কামরুল

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন
অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন  © টিডিসি ফটো

নতুন জাতীয় কারিকুলাম শিক্ষার্থীদের জন্য হলেও তাতে আমাদের (শিক্ষক) উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। তিনি বলেছেন, নতুন জাতীয় কারিকুলামের ভোক্তা আমরা। স্কুলের শিক্ষার্থীরা এসব কারিকুলামে পড়ে আমাদের ছাত্র হবে। তাই নতুন জাতীয় এই কারিকুলাম নিয়ে আমাদের উদ্বেগ আছে।

আজ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২১: আমরা কেন উদ্বিগ্ন?’ শীর্ষক এক প্রতিবাদী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ড. গীতি আরা নাসরীন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় কারিকুলামে তো কোনো অসুবিধা ছিল না। তবে শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক অসুবিধা রয়েছে। আপনারা (সরকার) তো সেদিকে নজর দেননি। কারিকুলামে তো একটা খোলস মাত্র। দেশের শিক্ষায় অনেক সমস্যা আর তার মধ্যে কারিকুলামে তো লাস্ট সমস্যা। কারিকুলাম বদলানোর জন্য কেউ দাবি করেনি। এটাতো কোনো সমস্যা না।

“সমস্যা কোথায়? সমস্যা হলো আপনারা ভালো শিক্ষক নিয়োগ দেননি, সমস্যা হলো আপনারা শিক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেননি, সমস্য হলো স্কুল-কলেজের দুষ্ট রাজনীতি প্রবেশে করিয়েছেন আপনারা। রাজনীতির নামে প্রতিটি স্কুল এখন ‘রাজনীতির খপ্পেরে’ পড়ে গেছে। আমিও গ্রামের স্কুল-কলেজে পড়েছি, সেসময় শিক্ষকরা অতোটা ভালো না হলেও তাদের ছিল মমতা, সর্বোচ্চ দিয়ে পড়াতেন তারা। তারা না পড়লে আমি এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না।”

তিনি আরও বলেন, আমার বোধ হওয়ার পর থেকে দেখতে পাচ্ছি দেশের স্কুলের মান কিভাবে নষ্ট হচ্ছে। আজকে যদি বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি মিশনারি স্কুল-কলেজ সিদ্ধান্ত নেয় তারা বাংলাদেশ থাকবে না, তাহলে দেশের শিক্ষার মান পাতালে চলে যাবে। শুধু বর্তমান সরকার নয়, কোনো সরকারই দেশের শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করেনি।

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, পুরনো কারিকুলামে কোচিং বাণিজ্য হয়, শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করত হয় বলে দোষারোপ করা হলো। এটি ডাহা মিথ্যা। কোচিং বাণিজ্য হয় ভালো শিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ার কারণে। শিক্ষকরা লেখাপড়া ছাড়া অন্য সকল কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফটোকপি দিয়ে পড়াশোনা চলে, পাঠ্যবই খুলে দেখার সময় পায় না।

তিনি আরও বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার জন্য যে উপযুক্ত পরিবেশের প্রয়োজন, তা বাংলাদেশে তৈরি করা হয়নি। ফিনল্যান্ড একদিনে আজকের অবস্থানে আসেনি। ১২০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ধীরে ধীরে আজকের অবস্থানে পৌঁছেছে। পৃথিবীর কোথাও একটি কারিকুলামের শতভাগ একসাথে পরিবর্তন করা হয় না। সর্বোচ্চ ২০ শতাংশে পরিবর্তন আনে, যাতে ভুল হলেও তার নেতিবাচক প্রভাব কম পড়ে। 

“বাংলাদেশে ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে। পৃথিবীর আর কোথাও এই বিষয় এভাবে পড়ানো হয় না। অথচ নবম-দশম শ্রেণীতে বিজ্ঞানকে সংকুচিত করা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, রসায়ন থেকে তথ্য প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”

তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ে চরম অবহেলা করা হয়েছে। প্রচ্ছদ তৈরি, কাগজের মান, বইয়ের কন্টেন্ট সবকিছুতেই অবহেলা করা হয়েছে। ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী আমাদের শিক্ষাক্রম বদলের কথা বলা হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের অনার্সের আগ্রহের বিষয় ‘শিক্ষাবিজ্ঞান’। শুধু এ বিষয়ে অনার্স করলেই হয় না। তিনি শিক্ষকতা করতে চান কি না মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি জিজ্ঞাসা করা হয়। এটা হতে হয় তার প্রথম পছন্দ; এর জন্য প্যাশন প্রয়োজন। এদিকে বাংলাদেশে সকল স্থানে ব্যর্থ হয়ে শেষ প্রাইমারি শিক্ষকের চাকরি করেন। তাদের বেতনও অসম্মানজনক।


সর্বশেষ সংবাদ