শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জিং
দেশে শিক্ষকতায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তার কথা চিন্তার করে অনেকেই শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেল নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। তা না হলে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেছেন বক্তারা। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগ নেতা রাশেক রহমান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মশিউর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল।
এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আব্দুল হালিম, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম, সাংবাদিক মুন্নি সাহাসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন গণমাধ্যমের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান
এসময় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরা অন্য ক্যাডেরে চলে যাচ্ছে সেটা সত্যি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে হবে।’ সেজন্য এ পেশার উন্নয়ন কীভাবে করা যায় সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এতে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো একটি জরুরি উপাদন। এটি নিয়ে আমরা এখনও এগোতে পারিনি। এখানে আরও কাজ করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি।
শিক্ষকদের সামাজিক ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের একটি বিষয় রয়েছে। শিক্ষকদের একসময় পয়সা ছিল না কিন্তু তাদের সামাজিক একটি মার্যাদর জায়গা ছিল। তাই্ তারা ত্যাগ শিকার করেও সে পেশায় থাকত। কিন্তু এখন তাদের সেই কমফোর্টের জায়গাতে নিয়ে যেতে হবে—জানান শিক্ষামন্ত্রী।
ক্যাডার বৈষম্য নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এখানে ক্যাডার বৈষম্য আছে এবং সেগুলো নিয়ে আন্দোলনও আছে। একই সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা আছে। পাশাপাশি এসব বিষয় নিয়ে সরকারের সহমর্মিতাও রয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘শিক্ষায় আমরা সেভাবে পরিবর্তন আনিনি, আনার চিন্তাও করিনি’—এটা দুঃখজনক
সভায়র শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের পথে আমরা এগিয়ে যাবো। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আজকের সভায় সক্ষমতা, দক্ষতা ও মূল্যবোধ নিয়ে যে কথাগুলো উঠে এসেছে এসব জায়গায় আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে একটি রূপান্তরিত জায়গার মধ্যে নিয়ে যেতে হবে।
সভায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সরকার যে পরিকল্পনা করেছে তাতে দ্বিমত থাকার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াতে শিক্ষকের বিকল্প কিছু নেই এবং সেই শিক্ষক তৈরি করতে গেলে তাতে মাস্টারপ্ল্যান অবশ্যই থাকতে হবে। আমি অনুরোধ করবো সামনে নির্বাচন; এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্লেন্ডেড এডুকেশন নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সেটা কিন্তু মাঝপথে আটকে গেছে।
“আমার অনুরোধ থাকবে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে শিক্ষা পরিবার থেকে ব্লেন্ডেড এডুকেশন নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান এবং প্রাইমারি-মাদ্রাসা থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার সকল স্তরের শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো এবং প্রশিক্ষণের মহাপরিকল্পনা ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের একটি চ্যালেঞ্জের সম্ভবনা কিন্তু রয়েছে।”
অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, আমি সরকারকে দু’টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বলবো; একটি হচ্ছে ব্লেন্ডেড এডুকেশন নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন এবং অন্যটি হচ্ছে সর্বস্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষার মানোন্নয়নে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো। এ দুটি বিষয় মাথায় রেখে এগুলো নতুন শিক্ষা বাস্তবায়নে আমরা অনেক বেশি ইতিবাচক সাফল্য পাবো।”
এসময় মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আমি পিএসসিতে বিসিএসের ভাইভা বোর্ডে পরীক্ষক হিসেবে মাঝেমধ্যে গিয়ে থাকি। সেখানে দেখি শিক্ষকতা তাদের প্রথম চয়েজ থাকে না। প্রথম চয়েজ থাকে প্রশাসন কিংবা অন্য ক্যাডারে। তাই শিক্ষকতা পেশাকে আকৃষ্ট করতে আমাদের কাজ করতে হবে।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক মোহাম্মদ তারিক আহসান বলেন, সার্বিকভাবে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা রুপান্তর হচ্ছে। আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে। তাই বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে।