শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে কাল, ডেঙ্গু শঙ্কায় শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা
দেশে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে আগামীকাল রবিবার খুলছে সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোনা কয়েকটি জেলা প্লাবিত হয়েছে বন্যায়। এসব জেলার কয়েকটি স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। অন্যদিকে রাজধানীতে বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক ছাত্রী মারা গেছে। এসব শঙ্কা নিয়ে রবিবার দেশে পুরোদমে পাঠদান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে সব ধরেনর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। এরই মধ্যে ডেঙ্গু নিয়ে সর্তকতা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড।
অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজননের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ উত্তম। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের ফাঁকা জায়গায় দীর্ঘদিন পানি জমে থাকে। সেসব জায়গাই এডিস মশার প্রজননস্থল হিসেবে কাজ করে। ঈদুল আজহার কারণে দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এর মধ্যে গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। যা ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে।
অভিভাবকদের এমন উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) প্রফেসর বেলাল হোসাইন বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে আমরা অবগত। ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে একটি নির্দেশনা দেওয়া হবে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকাকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষ আর বাসায় থাকার সময় অভিভাবকরা মশার কামড় প্রতিরোধে যা যা করা দরকার তা করতে হবে।
আর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. নুরুল আমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ঈদের আগেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্কুল খোলার আগে শিক্ষা কর্মকর্তা তা তদারকি করবেন। কোনো প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না থাকলে অধিদপ্তরকে জানতে অভিভাবকদের অনুরোধ করেন তিনি।
যেসব জেলায় বন্যা হয়েছে, সেখানে কত সংখ্যক প্রাথমিক স্কুল পানিতে তলিয়ে গেছে তার তথ্য জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চাওয়া হয়েছে। তথ্য পাওয়ার পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে ওইসব স্কুল খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। যেসব এলাকায় স্কুল পানির নিচে তলিয়ে গেছে সেখানে স্কুল খোলার রাখা সম্ভব হবে না। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আশা করি, আগামী রবিবারের আগেই বন্যা পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে—যুক্ত করেন ড. মো. নুরুল আমিন।
স্কুল খোলার আগে মানতে হবে যেসব নির্দেশনা:
মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে দেশের সব প্রাথমিক স্কুল পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদুল আজহার ছুটির আগে ও পরে খোলার সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচ্ছন্ন করতে নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৫ জুন এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করা হয়। এরপর ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
বৃহস্পতিবার মাউশির নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, সম্প্রতি ঢাকা মহানগর ও দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং অনেকে ঝুঁকিতে আছেন। সতর্কতা অবলম্বন করলে এ রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া সম্ভব। ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত রোগ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ ও ভবনগুলোর মধ্যে পানি জমে থাকে, এমন জায়গা ও ফুলের টবে জমে থাকা পানি এডিস মশার উপযুক্ত প্রজননকেন্দ্র। এ অবস্থায় ডেঙ্গুর বিস্তার রোধে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঈদুল আজহার ছুটি-পরবর্তী খোলার পর কিছু বিষয় মেনে চলতে চলার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ ও ভবনগুলো পরিষ্কার রাখা, মাঠ কিংবা ভবনে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলা, ফুলের টব নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, এডিস মশার প্রজননের জায়গাগুলোতে যেন পানি জমতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিষয়গুলো অবহিত করতে হবে—জানানো হয়েছে মাউশির নতুন নির্দেশনায়।
নির্দেশনায় আরও জানানো হয়েছে, ঈদুল আজহার ছুটিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ঈদুল আজহার ছুটি পরবর্তী অফিস বা বিদ্যালয় খোলার আগে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। যাতে করে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার প্রজনন না ঘটে। এসব বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।