ফুলে ফুলে সজ্জিত ভোলার বেগম রহিমা ইসলাম কলেজ, ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা
ফুলে ফুলে ভরে গেছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশীভূষণ বেগম রহিমা ইসলাম কলেজ ক্যাম্পাস। গাছে ফোটা এসব ফুলের মিষ্টি সুবাসে পাগল পারা পাখি আর প্রজাপতিরা। যা দেখে মুগ্ধ সবাই। রাজ্যের সব ফুল যেন এখানেই জড়ো হয়েছে! যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই বিচিত্র সব বর্ণাঢ্য ফুলের সমারোহ। ভ্রমরের পাশাপাশি ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা ক্যাম্পাসে আগতরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সবুজ ক্যাম্পাসের ইট-পাথরে গড়া ভবনের সামনে দ্যুতি ছড়াচ্ছে রঙ-বেরঙের বাহারি ফুল। হৃদয়কাড়া ফুলের মন মাতানো সৌরভ আর স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ সবাই। ফুলের সৌন্দর্য ব্যঞ্জনায় যেন স্বর্গীয় রূপ ধারণ করেছে।
রজনীগন্ধা, গোলাপ, জুই, রঙ্গন, জবা, বেলি, টগর, হাসনাহেনা, চামলী, গন্ধরাজ, কলসীলতা, গাঁদা ও সূর্যমুখিসহ লাল-নীল রঙের দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের এসব বাহারি ফুল। ফুলের ওপর নাচছে পাখি। সবমিলিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফুল ফুটেছে এই ক্যাম্পাসে। ফুলে ফুলে সজ্জিত ক্যাম্পাস যেনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য মুগ্ধ কোনো ছবি। আর ফুলে সুশোভিত ক্যাম্পাস দেখতে আসেন অনেকেই। সবমিলিয়ে প্রায় শতাধিক ধরনের ফুল ফুটেছে এই ক্যাম্পাসে। ফুলের ওপর নাচছে পাখি।
আরও পড়ুন: উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও চাকরিতে এখনও পিছিয়ে নারীরা
ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা জান্নাতুল মাওয়া বলেন, ক্যাম্পাসটি ফুলে ফুলে সেজেছে। যা দেখতে অনেক ভাল লাগছে, ফুলের সৌন্দর্যে মোড়ানো কলেজ ক্যাম্পাস দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
একই কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, প্রকৃতিতে যেমন আসে সজীবতা বা পরিবর্তন, ঠিক তেমনটি নানা রকমের ফুলে আমাদের ক্যাম্পাস ভরে উঠেছে। ক্যাম্পাসের নানা রঙের ফুলের আবির আর মৌ মৌ গন্ধে কেড়ে নিচ্ছে বিষাদ। অনুরাগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বহিঃপ্রকাশের বড় মাধ্যম ফুল।
'টুকটুকে লাল গোলাপের উপর শিশির বিন্দুর ফোটায় সূর্যের আলোর ঝলকানি হৃদয়ে দোলা দেয়। মায়াভরা রূপ দেখে বিমোহিত হই। মনে হয় কোনো এক স্বপ্নের রাজ্যে বাস করছি। প্রতিদিন বান্ধবীরা মিলে কলেজের ক্লাস করতে আসি ক্লাস শেষ হলে এই সৌন্দর্য উপভোগ করেন বলে জানান শিক্ষার্থী অনিতা, জুনিয়া, শিল্পী।
কলেজের তানজিল, শামিম, রায়হানসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ‘আগের চেয়ে আমাদের ক্যাম্পাস বহুগুণে সুন্দর হয়েছে। একটানা ক্লাস আর পড়াশোনায় যখন আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই তখন এই ফুলের বাগানে আসি, ফুল দেখি, ছবি তুলি এবং আমাদের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। এক কথায় ক্যাম্পাসে এলেই মন জুড়িয়ে যায়। শিক্ষার পরিবেশকেও আরো বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়েছে। কলেজে এসে খুব ভালো সময় কাটে। একটি সুন্দর ক্যাম্পাস উপহার দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষ স্যারকে ধন্যবাদ।
কলেজের প্রভাষক মাকসুদর রহমান রুবেল বলেন, ‘ফুল সবাই ভালোবাসেন। কিন্তু ফুলের বাগান করা কষ্টসাধ্য। কলেজ ক্যাম্পাসে বাগান করা আরো কষ্টকর। আমাদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্যারের আগ্রহে এবং ঐকান্তিক পরিশ্রমে ফুলের বাগান করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও বাগান নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তারাও ফুলের বাগানটি রক্ষা করতে সহযোগিতা করছেন।
কলেজসূত্রে জানা গেছে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ শরিফুল আলম সোয়েবের সার্বিক দিক নির্দেশনায় নিয়মিত কলেজ ক্যাম্পাসের ফুল বাগানের পরিচর্যা করা হচ্ছে। ফুল চাষের আগে যেসব প্রস্তুতি নেওয়া দরকার তার সবই করা হয়েছিলো। যে কারণে কয়েক মাস আগে লাগানো গাছে ফুলে ফুলে ভরে গেছে ক্যাম্পাস।এসব বাহারি রঙের ফুলের দোল খেলা দেখতে কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এখানে অনেক দর্শনার্থী প্রতিদিন ভিড় করেন।
সুসজ্জিত এমন কলেজটি হলো চরফ্যাশন-মনপুরার যাদুকরী উন্নয়নের আলোকময় বরপুত্র দ্বীপজেলা ভোলার পাললিক মৃত্তিকার হিরণ্ময় আইকন আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের মমতাময়ী মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত শশীভূষণ বেগম রহিমা ইসলাম কলেজ।
শশীভূষণ বাজার সংলগ্ন চরফ্যাশন-দক্ষিণ আইচা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত কলেজটির অবকাঠামোগত নান্দনিকতা সড়ক পথের পরিবহণ যাত্রীসহ যে কারোই নজর কাড়ার জন্য যথেষ্ট।
এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শরিফুল আলম সোয়েব বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই কলেজটিকে ভোলা জেলার মডেল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরো জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ফুলের গাছে রোপণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে ফুলের চাষে বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়। ক্যাম্পাসে ঢুকলে শিক্ষার্থীদের মন ভালো হয়ে যায় সেটাইতো কর্তৃপক্ষের কাজ। আমরা তারই অংশ হিসেবে প্রতিবছর ফুলচাষে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিই। এ বছর অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি ফুলের চাষ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতরে যে ফুলের সমারোহ এটা শুধু কলেজের না,বাইরে যারা রয়েছেন তারাও এই সৌন্দর্য দেখতে আসেন।