জামাল ভূঁইয়া কি ফুটবলকে বিদায় বলছেন?
বাংলাদেশ ফুটবলের পরিচিত মুখ, জাতীয় দলের দীর্ঘদিনের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার অবসর নিয়ে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ক্রীড়া মহলে জোর গুঞ্জন উঠেছে। ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া এই মিডফিল্ডার প্রায় এক যুগ ধরে বাংলাদেশের ফুটবলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন, এবং তার হঠাৎ অবসরের সম্ভাবনা নিয়ে ভক্তদের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক ধরনের শঙ্কা ও কৌতূহল।
বুধবার (৪ জুন) ভুটানের বিপক্ষে খেলেছেন জামাল, জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তবে এর আগে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে কোচ জামালকে এক মিনিটের জন্যও মাঠে নামাননি। অনেকে বলছেন, সিঙ্গাপুর ম্যাচ দিয়ে ফুটবলকে বিদায় বলতে পারেন জামাল।
যদিও এখন পর্যন্ত জামাল ভূঁইয়া আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেননি, তবে তার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে 'শেষটা ভালো করতে চাই' জাতীয় পোস্টগুলো গুঞ্জনকে আরও জোরদার করেছে।
জাতীয় দলে জামাল ধীরে ধীরে মিডফিল্ডে নিজের একচেটিয়া জায়গা তৈরি করেন। কেবল দক্ষতাই নয়, মাঠের ভেতরে-বাইরে তার নেতৃত্বগুণও তাকে আলাদা করে চিনিয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামে পরিচিত এই খেলোয়াড় সবখানেই একজন প্রকৃত দলনেতা।
২০১৩ সালে প্রবাসী ফুটবলার হিসেবে বাংলাদেশ দলে প্রথম আসেন জামাল ভূঁইয়া। তখন দলে তিনি ছিলেন একমাত্র প্রবাসী। এখন সেই সংখ্যা ছয়ে পৌঁছেছে। ২০১৮ সাল থেকে তিনি জাতীয় দলের অধিনায়ক।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে একাদশে তার উপস্থিতি নিয়মিত নয়। যে খেলোয়াড় একসময় মাঝমাঠের চালক ছিলেন, সেই তিনি এখন অনেকটা দর্শকের ভূমিকায়। তারকা থেকে যেন ধীরে ধীরে ছায়ায় চলে যাওয়া এক চরিত্র।
সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স এবং বয়সের হিসাব মিলিয়ে অনেকেই ধরে নিচ্ছেন, হয়তো বিদায়টা আর বেশি দূরে নয়। বিশেষ করে জাতীয় দলের সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে তার শরীরী ভাষা, খেলার গতি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধরণ দেখে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, জামাল নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝেই ধীরে ধীরে পেছনে সরে যেতে চাইছেন।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, “জামাল ভাইকে আমরা এখনও দলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই দেখছি। তবে সিদ্ধান্তটা একান্তই তার। যদি তিনি অবসর নিতে চান, আমরা তাকে যথাযথ সম্মান দিয়েই বিদায় দিতে চাই।”
৩৫ বছরে পা রাখা জামাল এখন ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে। হয়তো আর বেশি দিন দেখা যাবে না তাকে লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠে ছুটতে। কিন্তু ভবিষ্যতের জাতীয় দলের ভিত গড়ে দেওয়ার পেছনে তার অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই।
জামাল ভূঁইয়ার অবসর নিলে তা হবে একটি যুগের অবসান। একসময় বাংলাদেশ দলকে আন্তর্জাতিক মানে তুলে ধরার ক্ষেত্রে যিনি ছিলেন অন্যতম চালিকা শক্তি, তার জায়গা পূরণ করা সহজ হবে না। তবে ফুটবলপ্রেমীরা এখনও অপেক্ষায় আছেন—এই গুঞ্জন কি সত্যি, নাকি কেবলই জল্পনা?