ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী কাঁচা পেঁয়াজ, খাবেন যেভাবে
বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এখন প্রায় ৫০ কোটির অধিক। ২০৩০ সালের এটি ৬০ কোটিতে পৌঁছাবে। বর্তমানে শুধু ঢাকা শহরেই প্রায় ১০ শতাংশ ছুঁয়েছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা এবং প্রি-ডায়াবেটিসের হার আরো ১০ শতাংশ। গতবছর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব তথ্য জানান।
ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য বিশেষ উপকারী এমনই একটি উপাদান হলো কাঁচা পেঁয়াজ। বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁচা পেঁয়াজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, সালফার কম্পাউন্ড, এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন রয়েছে। কাঁচা পেঁয়াজ টাইপ-২ ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য খুবই ভাল। এমনটাই দাবি করেছেন আমেরিকার এন্ডোক্রিন সোসাইটির গবেষকেরা। কাঁচা পেয়াজের কিছু উপকারিতা:
গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ: কাঁচা পেঁয়াজে থাকা সালফার কম্পাউন্ড এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁয়াজ ইনসুলিন প্রতিরোধ কমাতে সহায়তা করে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে।
হৃদরোগ ঝুঁকি কমায়: ডায়াবেটিস রোগীরা সাধারণত হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। কাঁচা পেঁয়াজে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: পেঁয়াজে থাকা ক্যালিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ: কাঁচা পেঁয়াজে রয়েছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টি-ভাইরাল গুণ, যা শরীরের বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।
টাইপ ২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার সঠিক কারণ স্পষ্ট ভাবে সব সময়ে জানা যায় না। তবে পারিবারিক ইতিহাসের সঙ্গে এর যোগাযোগ বেশ নিবিড়। অর্থাৎ, কোনও ব্যক্তির পরিবারের কারও যদি ডায়াবিটিস থাকে, তবে তাঁর ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, কোনও ব্যক্তি ভেবে থাকেন যে, খাবারে চিনি কম খেলে বা একেবারেই না খেলে কোনও দিন ডায়াবিটিস হবে না, সে ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ, খাবারে চিনি না খেলেও জাঙ্ক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, নরম পানীয়ের মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, টাইপ-২ ডায়াবিটিসে মেটফরমিন ওষুধের ডোজ় দেওয়া হয়। তবে কেউ যদি মিষ্টির পরিমাণ কম ও রোজের ডায়েটে পেঁয়াজ রাখেন, তা হলে ওষুধ কম খেতে হবে। পেঁয়াজের সালফার যৌগ ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পরে।
পেঁয়াজ যেভাবে খাবেন:
স্যালাডে বা স্যান্ডউইচে কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া যেতে পারে। ডাল, সব্জি বা মাছ-মাংসে, তরকারিতে পেঁয়াজ দিয়ে খেতে পারেন। তবে পেঁয়াজ বেশি তেলে ভাজা যাবে না।
স্যুপে বা স্ট্যুতে পেঁয়াজ খেলে উপকার পাবেন। পেঁয়াজের রসও উপকারী। তবে সকলের শরীর সমান নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই খাওয়া উচিত।