২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:১০

তুলসি পাতার ঔষধি গুণাগুণ

তুলসি পাতা  © সংগৃহীত

তুলসি গাছ আমাদের আধ্যাত্মিক ও দৈনন্দিন জীবনে প্রাচীনকাল থেকে অপরিহার্য উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচিত। হিন্দু ধর্মে এটি দেবী রূপে পূজা করা হয় এবং গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি বাড়ির উঠোনে তুলসি গাছ দেখা যায়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, তুলসি ঘরে শান্তি ও ইতিবাচক শক্তি আনে। তবে তুলসির গুণ কেবল আধ্যাত্মিক নয়; এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায়ও অত্যন্ত কার্যকর। বৈজ্ঞানিকভাবে, তুলসির নাম Ocimum sanctum বা Ocimum tenuiflorum, এবং এটি ল্যামিয়াসি গোত্রভুক্ত। তুলসির দুই প্রধান প্রজাতি; শ্বেত তুলসি ও কৃষ্ণ তুলসি উভয়ই ঔষধি বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। সাধারণত ৩০–৬০ সেমি উচ্চতায় জন্মানো এই গাছের পাতা ও ফুলে বিশেষ সুগন্ধ থাকে, যা এটিকে অন্যান্য উদ্ভিদ থেকে আলাদা করে।

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় তুলসিকে ‘অমৃত গাছ’ বলা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, তুলসির নিয়মিত ব্যবহার সর্দি, কাশি ও জ্বর উপশমে কার্যকর। এর ইউজেনল উপাদান ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট কমাতে সাহায্য করে। হজমজনিত সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের জ্বালা এবং অপ্রতুল হজমের ক্ষেত্রে তুলসির পাতা চিবিয়ে খাওয়া বা চা হিসেবে পান করা যায়। নিয়মিত তুলসির ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও উপকারী। মানসিক চাপ কমাতে তুলসির চা বা রস ব্যবহার করা হয়, কারণ এর সুগন্ধি ও উপাদান মানসিক চাপ হ্রাসে সহায়ক।

তুলসির ব্যবহার কেবল অভ্যন্তরীণ নয়, বহিরাগতভাবেও কার্যকর। ত্বকের ক্ষুদ্র সমস্যা, একজিমা বা সংক্রমণ দূর করতে তুলসির রস প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া আয়ুর্বেদিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলসিকে রক্তপরিষ্কার ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারক উদ্ভিদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিদিন ২–৩ পাতা চিবিয়ে খাওয়া, গরম পানিতে ভিজিয়ে চা হিসেবে পান করা, অথবা পাতা কুঁচি করে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে তুলসির সর্বোত্তম সুবিধা নেওয়া যায়। 

তুলসী পাতার রস খেলে দ্রুত জ্বর ভাল হয়, তুলসী পাতা গরম পানিতে সেদ্ধ করে সে পানিতে গড়গড়া করলে মুখ ও গলার রোগজীবাণু মরে, শ্লেষ্মা দূর হয় ও মুখের দুর্গন্ধও দূর হয়, তুলসী চা শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দূর করে এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ায়, মাথা ব্যথা ও শরীর ব্যথা কমাতে তুলসী খুবই উপকারী, চোখের সমস্যা দূর করতে রাতে কয়েকটি তুলসী পাতা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ওই পানি দিয়ে সকালবেলা চোখ ধুয়ে ফেলুন, তুলসীপাতার রস বা চা প্রতিদিন একগ্লাস করে পান করলে, আমাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার শঙ্কা কমে যায়। আর যদি কিডনিতে পাথর জমে তাহলে তুলসী পাতার রস টানা ৬ মাস পান করলে পাথর গলে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, ত্বকে ব্রণের সমস্যা সমাধানের একটি সহজলভ্য ও অন্যতম উপাদান হল তুলসি পাতা। তুলসি পাতার পেস্ট তৈরি করে তা ত্বকে লাগালে এই সমস্যাগুলি অনেকটাই কমে যায়।

আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘তুলসি গাছকে প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শরীর ও মন উভয়েই উপকার হয়। এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে সমৃদ্ধ করতে পারে।‘ সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, তুলসির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আধুনিক চিকিৎসাতেও কার্যকর। বিশ্বব্যাপী হারবাল মেডিসিন ও স্বাস্থ্যসেবা শিল্পে তুলসির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা প্রমাণ করে এর স্থায়ী মূল্য।

সূত্র: Ayurvedic Pharmacopoeia of India (2021), Journal of Ethnopharmacology (2022),