কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া স্বাস্থ্যের উপকারী নাকি ক্ষতিকর?
আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এক অবিচ্ছেদ্য উপাদান পেঁয়াজ। রান্নায় ব্যবহারের পাশাপাশি অনেকেই কাঁচা পেঁয়াজ খেতে পছন্দ করেন—ভাতের সঙ্গে, সালাদে কিংবা ইফতারের টেবিলে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া কি স্বাস্থ্যকর? না কি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে?
পুষ্টিগুণে ভরপুর কাঁচা পেঁয়াজ
পুষ্টিবিদরা বলছেন, কাঁচা পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ফ্ল্যাভনয়েড ও সালফার যৌগ। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কাঁচা পেঁয়াজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায় এবং হজম শক্তি বাড়ায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান বিভাগের চিকিৎসক ডা. সানজিদা মাহমুদ বলেন, “প্রতিদিন পরিমিত কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে।”
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে
বিশেষ করে গরমকালে কাঁচা পেঁয়াজ শরীরের অতিরিক্ত উত্তাপ কমাতে সাহায্য করে। প্রচণ্ড রোদে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে কেউ কেউ এক টুকরো কাঁচা পেঁয়াজ খেয়ে থাকেন। লোকজ বিশ্বাসে এটিকে হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করার ঘরোয়া উপায় হিসেবে ধরা হয়।
তবে সতর্কতা দরকার কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে
কাঁচা পেঁয়াজের অনেক উপকার থাকলেও সব মানুষের জন্য তা একরকম নিরাপদ নয়। যাদের গ্যাস বা অ্যাসিডিটির সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ান কবির বলেন, “যাদের হজমে সমস্যা আছে বা যারা আইবিএস (ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম) এ ভুগছেন, তাদের কাঁচা পেঁয়াজ না খাওয়াই ভালো। কারণ এতে থাকা ফ্রুকটান হজমের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।”
তাছাড়া কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার পর অনেকেই মুখে দুর্গন্ধ অনুভব করেন, যা সামাজিক অস্বস্তির কারণ হতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে মুখ ধোয়া বা পুদিনা পাতা চিবিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য কাঁচা পেঁয়াজ
কাঁচা পেঁয়াজ রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে। তবে অবশ্যই পরিমাণ বজায় রাখতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়া স্বাস্থ্যকর, তবে তা নির্ভর করে ব্যক্তির দেহের স্বাভাবিক অবস্থার ওপর। নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি দেহের জন্য দারুণ উপকারী। তবে যাদের পেটের সমস্যা, অ্যালার্জি বা কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ খাওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাদের কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
খাবার যেমন সুস্বাদু করতে, তেমনি স্বাস্থ্যের ভারসাম্য রক্ষাতেও সহায়ক হতে পারে এই সহজলভ্য উপাদানটি। তাই বেছে নিন আপনার শরীরের জন্য উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস—সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।