কালিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বাংলাদেশী শিক্ষার্থী আরিফ
কালিকাট বিশ্ববিদ্যালয় ভারতের কেরালার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। সেই ক্যাম্পাসেই প্রথম বাংলাদেশী শিক্ষার্থী হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন শেখ মো. আরিফুল ইসলাম আরিফ। তিনি বর্তমানে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক পড়ছেন। এর আগে আরিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন৷
তিনি ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হন এবং কালিকাট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। তার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বৈদ্যনাথ শেখপাড়া গ্রামে।
আরিফ জানান, ছোটবেলা থেকেই তার স্বপ্ন ছিল বিদেশে পড়াশোনা করার। পড়াশোনার পাশাপাশি নতুন জায়গা দেখা, নতুন সংস্কৃতির সাথে পরিচয় হওয়াটাও তার শখ ছিল৷ পরিবারের সমার্থ্য না থাকার কারণে সেটা আর সম্ভব হয়ে উঠেনি৷ কিন্তু দমে যাননি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় তিনি ভারত সরকারের বৃত্তির জন্য আবেদন করেন এবং সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হন৷ তিনি আরও জানান যে, ঢাকা শহর তার মতো ছাত্রদের জন্য অনেক ব্যায়বহুল।
আরিফের পরিবারের ঢাকায় পড়াশোনার খরচ বহন করার সক্ষমতা না থাকায় টিউশন করাতেন তিনি। যার কারণে, সেমিস্টার পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল আসতো না৷ তাই তিনি অনেক দিন থেকেই এমন একটি সরকারি বৃত্তির সুযোগ খুঁজতেছিলেন যেখানে পড়াশোনা সম্পূর্ণ ফ্রি এবং মাসিক বৃত্তির ব্যবস্থাও আছে৷
আরিফ জানান, তিনি স্বভাবতই প্রকৃতি প্রিয় ও ভ্রমণ পিপাসু৷ ভারত সারা পৃথিবীর একখন্ড মডেল। ভারতে পড়ার পাশাপাশি এরকম অতিপ্রাচীন এক জনপদ, বিভিন্ন সংস্কৃতিকে জানার সুযোগ পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। কেরালার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কারো অজানা নেই৷ কেরালাকে বলা হয় ঈশ্বরের নিজস্ব দেশ। সেখানে একসাথে পাহাড়, নদী, সমুদ্র একসাথে দেখা যায়। এই সুযোগ তিনি হাতছাড়া করতে চাননি৷ পাশাপাশি, কেরালা শিক্ষার মানের জন্য অনেক বিখ্যাত। আর সেখানেই ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে৷ এই দুইয়ে মিলে তিনি কেরালাকে পড়ার জন্য নির্বাচন করেন৷
তিনি আরও জানান, তাকে সেন্ট জোসেফ কলেজ, কালিকাটে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে৷ এই কলেজটি ভারতের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কলেজগুলোর মধ্যে একটি৷ কলেজটির মনোরোম সৌন্দর্য্য যে কারোরই নজর কাড়বে৷ তাছাড়া, ক্রীড়াঙ্গনেও বেশ সুনাম রয়েছে কলেজটির৷
“কলেজেটির শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটা আধুনিক ও বাস্তবমুখী। শিক্ষকগণ অনেক অভিজ্ঞ ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের৷ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে তিনি সকল সুবিধা কলেজ থেকে পেয়ে থাকেন। তিনি সেখানকার মানুষ আথিতেয়তায় মুগ্ধ। সহপাঠীরা অনেক হেল্পফুল৷ কোনো প্রয়োজনে সাহায্য চাইলে তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করে৷ এরকম একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হতে পেরে তিনি গর্ববোধ করেন৷”
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ নতুন এক পরিবেশে প্রথম নিজেকে মিশিয়ে নেয়াটা অনেক কষ্টসাধ্য। ভিন্ন ভাষার জন্য অনেক কিছু তিনি বুঝতে না পারলেও, সবাই মোটামুটি ইংরেজি পারে বলে তেমন অসুবিধা পোহাতে হয় না৷ তবে, খাবার নিয়ে একটু সমস্যায় পড়তে হয়৷ দক্ষিণ ভারতের খাবার সাধারণত বাঙ্গালী খাবার থেকে অনেক আলাদা৷ আবার, রান্না করার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়াটাও একটু কঠিন৷ তবুও, তিনি নিজেই রান্না করতে পছন্দ করেন৷
একমাত্র বাঙ্গালী শিক্ষার্থী হওয়ায় একাকিত্ম মনে হয়। করোনার প্রকোপের কারণে ক্লাস বন্ধ হওয়ায়, সেটা আরো বেড়ে গেছে৷ তবে সোস্যাল মিডিয়ায় পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সাথে সময় কাটালেই ভালো লাগে তার৷
আরিফ জানান, পরবর্তীতে দেশে ফিরে একজন উদ্যোক্তা হতে চান তিনি৷ তার কৃষি খামার ও ডেইরী ফার্ম নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে৷ তবে তিনি যেন আগে ভালোভাবে পড়াশোনা করে, ভালো ফলাফল নিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারেন, সেজন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন৷