ভিসা না পেয়ে দেশে আটকা পড়েছে জার্মানি পড়ুয়া ১৫০০ শিক্ষার্থী
প্রতিবছর হাজার হাজার মেধাবী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী জার্মানিতে যান উচ্চশিক্ষার নিতে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম শেষে শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনের আলো নিয়ে আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল করে দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জার্মানিতে ফিরতে পারছেন না। ভিসা না পেয়ে দেশে আটকা পড়েছেন জার্মানি পড়ুয়া ১৫০০ শিক্ষার্থী।
গত ১ মে থেকে বিদেশে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ভিসা কার্যক্রম আবার শুরু হয়। এ বিষয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত (পিটার ফারেনহোল্টজ) বাংলাদেশের উদ্দেশে একটি টুইটে বলেছিলেন, তিনি বুঝতে পারছেন যে শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
এই কার্যক্রম শুরুর এক মাস পর, ভিসা–সংক্রান্ত কার্যক্রম জুন মাসের শেষ সপ্তাহে আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপর শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টুইট–রিটুইট করতে থাকেন ভিসাপ্রক্রিয়া শুরুর আশায়। রাষ্ট্রদূত টুইট করে ভিসাপ্রক্রিয়ায় বিলম্বের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি এর কারণ হিসেবে লোকসংকটের কথা উল্লেখ করেন। একই সময়ে তিনি আশ্বস্ত করেন, দূতাবাসে একটি টিম গঠনের মাধ্যমে ‘ছাত্র ভিসা’ ইস্যুকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হবে। যা–ই হোক, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক, টুইটের কিছুক্ষণ পরই বাংলাদেশে জার্মান রাষ্ট্রদূত পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এরপর ৪০ দিন কেটে গেল। সম্প্রতি নতুন ভিসা টিম বাংলাদেশে গেছে। তবে তারা আগের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ছাত্র ভিসা কার্যক্রম শুরু করেনি।
এদিকে অন্য দূতাবাস এবং হাইকমিশনগুলো নিজ নিজ সরকারের নিয়ম অনুসরণ করছে এবং দুই মাস ধরে ছাত্র ভিসায় কাজ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, কোরিয়া, জাপান এবং অন্যান্য দূতাবাস কোনো সমস্যা ছাড়াই ছাত্র ভিসায় কাজ করছে। এমনকি ভিএফএস গ্লোবাল পুরোপুরি চলছে। গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় লক্ষণীয় যে এসব দূতাবাসের কোনোটিতেই জার্মান দূতাবাসের মতো গত বছর থেকে হাজারো শিক্ষার্থী সাক্ষাৎকারের জন্য অপেক্ষা করছেন না। পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরামর্শের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারও শিক্ষার্থীদের ভিসা কার্যক্রম কঠোর বিধিনিষেধের সীমাবদ্ধতা থেকে বাদ দেয়।
একটিবার ভেবে দেখা যেতে পারে, কোনো ছাত্র দূতাবাসে ২০২০ সালের জুলাইয়ে তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করেন। তত দিনে তিনি অনলাইনে দুটি সেমিস্টার শেষ করেছেন, ব্লক মানি (থাকার খরচ) এবং টিউশন ফি পাঠিয়েছেন। এখন তাকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্যাম্পাসে সরাসরি থাকতে বলা হয়েছে। আর না থাকলে তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যেতে পারে বা সমস্যায় পড়তে পারেন।
অন্যান্য দেশে (যেমন ভারত, পাকিস্তান, ইরান, নাইজেরিয়া) মহামারির শুরুতে সব জার্মান মিশনই একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। তারা সমস্যা কাটিয়ে ওঠে ও তাদের সরকার ছাত্র ভিসা দ্রুততর করার জন্য সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে। জার্মান দূতাবাসের সদিচ্ছাই এই সমস্যার সমাধান হয়েছে।
যখনই বিভিন্ন সময় দূতাবাসে ভিসা–সংক্রান্ত বিষয়ে ফোন করা হয়, উত্তরে বলা হয় যে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে ভিসাপ্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং ইস্যুটির গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। দূতাবাসের ভিসা-সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশে শুরু হওয়া দেশব্যাপী বিধিনিষেধের সময় ভিসা-সংক্রান্ত কার্যক্রম বিশেষ সেবার আওতায় আনা হয়।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো শাহরিয়ার আলমও টুইট করেছেন, তিনি পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছিলেন যে শিক্ষার্থীদের কোনো বাধা দেওয়া উচিত নয়। বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থাও করে সরকার।
বাংলাদেশ সরকারের আহ্বান ও অনুরোধের পর ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাস ভিসার ব্যাপারে নতুন করে পদক্ষেপ নেয়নি।
গত এক বছরে এক হাজার পাঁচ শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানির বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। গত ৩ সেমিস্টারে অনলাইনে ক্লাস করেছেন (গ্রীষ্ম ২০২০, শীত ২০২০/২১ গ্রীষ্ম ২০২১) শিক্ষার্থীরা। প্রায় প্রত্যেকেই ইতিমধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ ইউরো জমা করেছেন। এসব শিক্ষার্থী ভিসা ইন্টারভিউ এবং ভিসার অপেক্ষায় দিন পার করছেন। ভিসার অপেক্ষায় থাকা হাজারো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভিসা বিভাগটি কার্যকর রাখতে এবং প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার জন্য জার্মান দূতাবাসের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন ভিসা বিভাগের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য।
জার্মানিতে গত সেমিস্টারে অনলাইনভিত্তিক কোর্স পরিচালিত হলেও, পরবর্তী শীতকালীন ২০২১ সেমিস্টার থেকে জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ক্লাস হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাসের কার্যক্রম নিয়মিত পরিচালিত না হলে সময়মতো ভিসা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। হাজারো পরিবার হতাশ হবে, শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে যাবে, দেশ হারাবে সম্ভাব্য গবেষকদের। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার জার্মান দূতাবাসের ভিসা বিভাগের কার্যক্রম দ্রুত করা খুবই জরুরি।