বাংলাকে লন্ডনের দ্বিতীয় ভাষা স্বীকৃতির খবর সঠিক নয়

ডিবিসি নিউজ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, "লন্ডনের দ্বিতীয় সরকারি ভাষা ‘বাংলা’ " শিরোনামে। লিংক: https://bit.ly/35We2sI। পুরো প্রতিবেদনটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো--

“লন্ডনে দ্বিতীয় সরকারি ভাষার স্বীকৃতি পেল বাংলা। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে সরকারি ভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ভাষার মর্যাদা পেয়েছে আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা। সম্প্রতি সেখানে বাংলা ভাষাকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বর্তমানে লন্ডনে প্রায় ৭২ হাজার বাংলা ভাষাভাষী লোক রয়েছে। জনপ্রিয়তা ও ব্যবহারের দিক থেকে ইংরেজির ঠিক পরেই এর অবস্থান। পোলিশ ও তুর্কি রয়েছে বাংলার পরেই।

লন্ডনের প্রায় ২ লাখ বাসিন্দা এই তিনটির মধ্যে যে কোনো একটিতে কথা বলেন। সম্প্রতি একটি সংস্থার সমীক্ষা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বাংলাভাষীদের সংখ্যা বাড়লেও ব্রিটিশদের মধ্যে মাত্র তিন শতাংশ মানুষ স্বচ্ছন্দে বাংলা বলতে পারেন বলেও জানিয়েছে ওই সমীক্ষা।

লন্ডনের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বাসিন্দাদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল সংস্থাটি। সেই সমীক্ষায় অনেক নতুন তথ্যই উঠে আসে। সেখানেই জানা যায়, লন্ডনের প্রায় ৩ লাখ বাসিন্দা বাড়িতে কোনো না কোনো বিদেশি ভাষায় কথা বলেন। সূত্র : এশিয়ান ভয়েস"

এখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি হলো, বাংলা ভাষার "লন্ডনে সরকারিভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ভাষার মর্যাদা" পাওয়া। আরও বলা হয়েছে, "সম্প্রতি এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়"। প্রকৃতপক্ষে সরকারিভাবে বাংলা ভাষাকে "দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় ভাষার মর্যাদা" বা এ ধরনের কোনো ঘোষণা বা "স্বীকৃতি" দেয়া হয়নি।

ডিবিসি নিউজে এশিয়া ভয়েস নামে একটি সংবাদমাধ্যমের বরাত দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে ভারতীয়দের পরিচালিত এই অনুল্লেখযোগ্য সংবাদমাধ্যমটি ২ ডিসেম্বর Bengali announced as the second most spoken language in London শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

তাতে বলা হয়েছে, "Bengali has been officially named as the second most-spoken language in London, followed by Polish and Turkish - with around 165,311 London residents speaking one of the three as their first language." প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে: https://www.asian-voice.com/…/Bengali-announced-as-the-seco…

এখানে officially (সরকারি অর্থে) শব্দটি ব্যবহার করা হলেও একই প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে-- "City Lit conducted research to find out the most common foreign languages spoken in boroughs of the capital."

অর্থাৎ, এটি একটি 'গবেষণা'র বা 'জরিপে' পাওয়া তথ্য, official বা সরকারি কোনো ঘোষণা নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, লন্ডনে সবচেয়ে বেশি মানুষ ইংরেজিতে কথা বলেন। এরপরে বেশি মানুষ কথা বলেন যথাক্রমে বাংলা, পোলিশ ও তুর্কি ভাষায়।

City Lit কী ধরনের প্রতিষ্ঠান তা তাদের ওয়েবসাইটেই দেয়া আছে। এটি প্রাপ্তবয়স্ক লোকদেরকে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষাদানকারী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অনেকটা কোচিং সেন্টারের মতো তাদের কার্যক্রম। ফি'র বিনিময়ে বিভিন্ন ভাষার ওপর বিভিন্ন মেয়াদী কোর্স করায় এই City Lit.

তাদের সম্পর্কে জানুন তাদের ওয়েবসাইটের about us সেকশনে। লিংক: https://www.citylit.ac.uk/about-us। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান নিজেদের ব্যবসায়িক নীতি নির্ধারণের জন্য ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর জরিপ বা গবেষণা চালিয়ে থাকে। City Lit এর উল্লেখিত গবেষণার ওপর ১৯ নভেম্বর তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত রিপোর্টটি পড়ুন এই লিংকে:
https://www.citylit.ac.uk/…/quiz-how-many-these-languages-d…

তারা নিজেরাও এটিকে শুধুই একটি গবেষণার ফল হিসেবে দাবি করেছে, সরকারি স্বীকৃতি হিসেবে দাবি করেনি। যেহেতু City Lit কোনো সরকারি কর্তৃপক্ষ নয়, বা সরকারি কর্তৃপক্ষের ম্যান্ডের প্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠানও নয়, ফলে এটির কোনো গবেষণার ফলকে 'সরকারিভাবে স্বীকৃতি' হিসেবে তুলে ধরাটা ভুল। আবার এই প্রতিষ্ঠানটি কোনো পেশাদার বা খ্যাতিমান কোনো 'গবেষণা প্রতিষ্ঠান'ও নয়, যাদের গবেষণাকে খুবই গুরুত্ব সহকারে নেয়া যেতে পারে।

এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখ্য, সরকারিভাবে কোনো ঘোষণা দেয়া হলে তা লন্ডনের সরকারি কর্তৃপক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হতো, এবং সেটির প্রেক্ষিতে উল্লেখযোগ্য সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তেমনটি কোথাও পাওয়া যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ