ডাক্তারি, এমবিএ শেষ করে তিনি এখন কম্যান্ডো ট্রেনার!
তিনি ভারতের প্রথম কম্যান্ডো প্রশিক্ষক। তবে তাঁর আরও একটি পরিচয় রয়েছে। তাঁকে ভারতের ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’-ও বলা হয়। প্রথমে ডাক্তরি ও পরে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এমবিএ পড়া এক তরুণী কীভাবে কম্যান্ডো প্রশিক্ষক হয়ে উঠলেন সেই কাহিনিই দেখে নেওয়া যাক।
নাম সীমা রাও। স্বাধীনতা সংগ্রামী পরিবারে জন্ম তাঁর। বাবা অধ্যাপক রমাকান্ত সিনারি এক জন স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সেই গল্প শুনে বড় হয়েছেন সীমা। সেখান থেকেই ঠিক করে নেন, যদি কিছু করতেই হয়, তা হলে দেশের সেবা করবেন।
এক সাক্ষাত্কারে সীমা বলেছিলেন, ‘স্কুলে যখন পড়ি, আমি খুব দুর্বল মনের ছিলাম। এর জন্য অনেক হেনস্থা সহ্য করতে হয়েছিল। তখন থেকেই মনে মনে স্থির করেছিলাম, এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আনবই।’ সেই দুর্বল মনের মানুষটির হাতেই আজ হাজার হাজার সেনা তৈরি হচ্ছে।
ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করতে করতেই দীপক রাওয়ের সঙ্গে আলাপ সীমার। পরে তাঁকে বিয়েও করেন। আজ তিনি যে ভূমিকা পালন করছেন, এর পিছনে তাঁর স্বামীর তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রয়েছে। দীপক মার্শাল আর্টে দক্ষ। সীমাকেও মার্শাল আর্ট শেখান তিনি।
ডাক্তারি ছাড়াও সীমা ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে এমবিএ করেছেন। পড়াশোনা করেছেন ইংল্যান্ডের ওয়েস্টমিনস্টার বিজনেস স্কুলে। কিন্তু গতানুগতিক এই পড়াশোনা বা মোটা বেতনের চাকরিতে মন টেকেনি তাঁর।
সীমার লক্ষ্যই ছিল দেশের হয়ে সেবা করা। তাই লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই চাকরি ছেড়ে দেন। শুধু সীমাই নয়, তাঁর স্বামী দীপকও একই স্বপ্ন দেখতেন। আর সেই স্বপ্ন সাকার করতে দু’জনেই ঠিক করে ফেলেন, দেশের সেনা-জওয়ানদের প্রশিক্ষণ দেবেন। সেই থেকেই কাজ শুরু।
গত ২০ বছর ধরে দেশের সমস্ত আমর্ড ফোর্স-এর ২০ হাজার জওয়ানকে ক্লোজ কোয়ার্টার কমব্যাট, রিফ্লেক্স শুটিং-এর প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন সীমা ও দীপক। সীমা নিজে বক্সিং, তাইকোন্ডো, ফায়ারফাইটিং, রাইফেল শুটিং-এর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। স্নাতক স্তরে পড়াকালীন তাইকোন্ডোতে ব্ল্যাক বেল্ট পান।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্যারা উইংস-এর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সীমা। আর্মি মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-এর কমব্যাট শুটিং ইনস্ট্রাকটর হিসেবেও কাজ করেছেন। ডাক্তারি, এমবিএ, মার্শাল আর্টের পাশাপাশি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতাতেও অংশ নিয়েছেন সীমা। মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড-এর ফাইনালিস্ট ছিলেন তিনি।
ব্রুস লি-র বিশেষ মার্শাল আর্ট ‘জিত কুনে দো’র প্রশিক্ষণও নিয়েছেন সীমা। বিশ্বে এমন দশ জন নারী রয়েছেন যাঁরা এই বিশেষ আর্টটি জানেন। সীমা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। ভারতের প্রথম মিক্সড মার্শাল আর্ট-এর উপর ছবি ‘হাতাপায়ি’র পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন সীমা।
স্বামী দীপকের সঙ্গে শুটিংয়ের একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন সীমা। নতুন এই পদ্ধতিটির নাম— ‘দ্য রাও সিস্টেম অব রিফ্লেক্স ফায়ার’। তাঁদের এই পদ্ধতি মূলত ক্লোজ কোয়ার্টার কমব্যাট-এর জন্য। ক্লোজ কোয়ার্টার কমব্যাট হল খুব কাছ থেকে শত্রুকে নিখুঁতভাবে খতম করা এবং কোনও রকম সময় নষ্ট না করেই।
তাঁর কাজের জন্য আর্মি চিফ সাইটেশনস, ইউএস প্রেসিডেন্ট’স ভলান্টিয়ার সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড এবং ওয়ার্ল্ড পিস ডিপ্লোম্যাট অ্যাওয়ার্ড পান সীমা। ২০১৯ সালে ফোর্বস-এর ‘ডব্লিউ-পাওয়ার ট্রেলব্লেজার’-এর তালিকায় ষষ্ঠ স্থান পান সীমা। ৫০ বছর বয়সি সীমা যে সত্যিই ‘ওয়ান্ডার উওম্যান’, তা মানেন তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ প্রাপ্তরাও। সূত্র: আনন্দবাজার।