সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে ‘ইউনাইটেড ভয়েস বাংলাদেশ’
সমাজের বিভিন্ন সমস্যার একাডেমিক বিশ্লেষণ, বিশেষ করে অপরাধ বিজ্ঞানের আলোকে বিভিন্ন অপরাধ ও মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের একাডেমিক বিশ্লেষণ ও এসকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করছে ‘ইউনাইটেড ভয়েস বাংলাদেশ’ নামে একটি অনলাইন সামাজিক সংগঠন। সামাজিকভাবে সচেতন নাগরিক, শিক্ষার্থী ও বিশিষ্টব্যক্তিদের সাথে নিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে এটি গড়ে তোলা হয়েছে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সচেতন শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে এই অনলাইন সামাজিক সংগঠনের যাত্রা শুরু হয় মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে। ইতোমধ্যে ‘United Voice Bangladesh’ নামে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ খুলে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সংগঠনটি।
জানা গেছে, শুরু থেকেই বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন মাভাবিপ্রবির সিপিএস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত ব্যাণার্জী ও সহকারী অধ্যাপক আওরঙ্গজেব আকন্দ । মাভাবিপ্রবি এর ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের পাশাপাশি যুক্ত রয়েছেন মাভাবিপ্রবি এর এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট বিভাগের একদল শিক্ষার্থীরাও। যারা পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করবে একই প্ল্যাটফর্মে।
সংগঠনের সাথে আরও যুক্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিপিএস বিভাগ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জাস্টিজ এন্ড ল’ বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের স্ব স্ব একাডেমিক ক্ষেত্রের বিশেষ জ্ঞানের আলোকে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে এই সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছেন।
এই অনলাইন সামাজিক সংগঠনের বিষয়ে মাভাবিপ্রবির সিপিএস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আওরঙ্গজেব আকন্দ বলেন, ‘ইউনাইটেড ভয়েস বাংলাদেশ তাদের জন্য, যারা অন্যায়, দূর্নীতি, সহিংসতা, গুজবসহ সকল প্রকার অপরাধ ও অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে চায়।’
তিনি বলেন, ‘এই অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনটি সেই সকল সচেতন নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য যারা অন্যায়ের প্রতিবাদের উপায় জানতে চায়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে সামাজিক সমস্যার ও অন্যান্য ঘটনার বিশ্লেষণ করতে চায়, জানতে চায়, মানবাধিকার রক্ষায় সোচ্চার হতে চায়। তাদের জন্য উন্মুক্ত এই প্ল্যাটফর্ম যারা শিখতে চায় এবং জানতে চায় কেন সামাজিক অনাচার ও অপরাধ ঘটে এবং এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কি হতে পারে।
এই স্বপ্ন কিছু তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর, যারা বৈষ্যমহীন সমাজ চায়, চায় সুবিচারের নিশ্চয়তা এমন মন্তব্য করে তিনি আরও জানান, এটি জাগ্রত বিবেকর স্বেচ্ছাসেবকদের মিলনস্থল, যেখানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবিলায় কি ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা বিশিষ্টজনদের আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে বেরিয়ে আসবে।
এছাড়াও বিভিন্ন অসংগতি হতে পরিত্রাণে এবং দেশকে বিজ্ঞান নির্ভর করতে যেসকল গবেষণাপত্র শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শেষে আর তেমন কাজে লাগানো হয় না, সেই গবেষণাপত্রগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে দেশ ও রাষ্ট্রের উন্নতি সাধনের জন্য এই অনলাইন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।
সংগঠনের আরেক প্রতিষ্ঠাতা সুব্রত ব্যাণার্জি জানান, সর্বসাধারণ বিশেষত তরুণ প্রজন্মের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তাদের পূর্ণাঙ্গ অংশগ্রহণ ও সংহতির মাধ্যমে অন্যায়-অবিচারহীন মানবিক এক সমাজ তথা কল্যাণকর বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিনির্মাণের অঙ্গীকার নিয়ে ইউনাইটেড ভয়েস বাংলাদেশ (United voice Bangladesh) এর যাত্রা শুরু হয়েছ।
সংগঠনের সাথে জড়িত কয়েকজন প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য জানান, আমাদের লক্ষ্য, একটি আদর্শবাদী, কল্যাণকামী ও শোভন সমাজ গড়া, যেখানে সবার জন্য স্বাধীনতা, সাম্য, মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার, সামাজিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত থাকবে। সকল শ্রেণীর মানুষের সমন্বয়ে ইতিবাচকভাবে এবং দেশ ও সমাজের কল্যাণের নিরিখে রাষ্ট্র ও সরকারকে সহায়তা করা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। আমরা চাই, সমাজের প্রতিটি মানুষকে সমাজের সকল অসঙ্গতি ও বিভিন্ন প্রকার ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সচেতন করা এবং ইতিবাচক কাজে অনুপ্রাণীত করা!
তারা বলেন, বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড কিংবা প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের বোধশক্তিকে জাগ্রত করা আমাদের উদ্দেশ্য। আর এই সকল বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিভিন্ন সচেতন নাগরিক, শিক্ষার্থী ছাড়াও দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিজ্ঞ শিক্ষক ও বিশিষ্টজনদের এই সংগঠনে সংযুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে বলে জানান তারা।
এরইমধ্যে সংগঠনটি করোনা পরিস্থিতিতে অপরাধের গতিপ্রকৃতি, মহামারি ও অপরাধের সম্পর্ক, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা, করোনা দুর্যোগের প্রেক্ষিতে পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও মহামারি এ সকল বিষয়ে বেশ কয়েকটি অনলাইন লাইভ সেশনের আয়োজন করেছে।
সেখানে দেশ ও দেশের বাইরে কর্মরত ও অধ্যয়নরত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞ শিক্ষক ও সচেতন শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। তরুণ প্রজন্মের সামাজিক দায়বদ্ধতাতে জাগ্রত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে ইউনাইটেড ভয়েস বাংলাদেশ (United Voice Bangladesh) ভবিষ্যতে ধারাবাহিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে বদ্ধ পরিকর বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।