কিশোর কুমারই বিদ্যানন্দের চেয়ারম্যান, অন্যথায় ফাঁকা থাকবে পদ
স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস বিতর্কের মুখে পদত্যাগপত্র জমা দিলেও তা এখনও গ্রহণ করা হয়নি। তাকে বোঝানো না গেলে চেয়ারম্যান পদ তার জন্য ফাঁকা রাখা হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী কমিটি।
আজ মঙ্গলবার বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের ঢাকা শাখার প্রধান সালমান খান ইয়াছিন একটি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, রাগ ও অভিমানে কিশোর কুমার পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যানের পদ থেকে কিশোর কুমার দাসের সরে যাওয়া নতুন নয়।
সালমান খান ইয়াছিন বলেন, এক মাস আগেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানালেও মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি। তবে নির্বাহী কমিটিতে এখনও তা গৃহীত হয়নি।
পদত্যাগের কারণ সম্পর্কে সালমান জানান, ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এর প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাস চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। বর্তমানে বিদেশে থেকেই সংগঠনটির কাজে যুক্ত আছেন। কিশোর কুমারের ধর্ম পরিচয় নিয়ে অনেকে অপপ্রচার চালায়। অনেকেই বলে এটি ইসকনের প্রতিষ্ঠান। একটি গোষ্ঠী তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করেছে।
তিনি বলেন, এমন আচরণে তিনি খুব কষ্ট পেয়েছেন। এমনিতেই একটু অন্যরকম মানুষ তিনি। প্রচণ্ড কষ্ট থেকেই কিশোর কুমার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,’ বলেন সালমান।
ইয়াছিন বলেন, ‘আমরা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। আশা করি পদে ফিরে আসবেন। তবে তিনি ফিরে না এলেও চেয়ারম্যানের পদ ফাঁকা থাকবে। বিদ্যানন্দ চলবে আগের মতোই চলবে। কিশোর কুমার দাস এখনো চেয়ারম্যান পদেই আছেন।’
কোনো চাপ ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই বলছেন মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরা তাকে চাপ দিয়েছি। কিন্তু তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি এটিও ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন।’
আজ মঙ্গলবার (৫ মে) বিদ্যানন্দের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদ থেকে তার সরে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিশোর কুমারের সরে যাওয়ার ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
ফেসবুকে ঘোষণায় বলা হয়, ‘বিদ্যানন্দ’ নামটি দিয়েছেন এক মুসলমান ব্র্যান্ড এক্সপার্ট। ‘আনন্দের মাধ্যমে বিদ্যা অর্জন’ স্লোগানের সাথে মিল রেখে তিনি নামটি দিয়েছিলেন। অনেকেই এটাকে ব্যক্তির নাম থেকে ভেবে ভুল করেন। এজন্য আমরা দুই বছর আগে নাম পরিবর্তনের পক্ষে-বিপক্ষে ভোটে করি এবং স্বেচ্ছাসেবকরা নাম পরিবর্তনের বিপক্ষে ভোট দেয়।
বিদ্যানন্দের প্রবাসী উদ্যোক্তা সশরীরে খুব অল্পই সময় দিতে পারেন। ৯০ শতাংশ মুসলিম স্বেচ্ছাসেবকরাই চালিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির বিশাল কর্মযজ্ঞ। তবুও উদ্যোক্তার ধর্ম পরিচয়ে অনেকেই অপপ্রচার চালায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে। যাতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কার্যক্রম, অনুদানের গতি।
গতমাসেই বিদ্যানন্দের প্রধান পদত্যাগের কথা জানিয়ে দেন স্বেচ্ছাসেবকদের। সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারে নয়, বরঞ্চ ব্যক্তিগত ত্যাগে স্বেচ্ছাসেবকদের অনুপ্রাণিত করার এবং নতুন মেধায় প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করার স্বপ্নে এমন সিদ্ধান্ত। আর তিনি প্রধানের পদ ছাড়লেও বিদ্যানন্দ ছাড়ছেন না, বরঞ্চ সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন।
আমরা বিষয়টি প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম চলমান ক্যাম্পেইনের পরে। কিন্তু কিছুদিন ধরে চলা মাত্রাতিরিক্ত সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারে জল ঢালতে খবরটি আজকে শেয়ার করলাম।
আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য বিষয়টি হতাশার নয়। বরঞ্চ পদ আঁকড়ে থাকার মানসিকতার এই সমাজে উল্টা পথে হাঁটতে পারার জন্য গর্ব হচ্ছে। আর বিদ্যানন্দে পদে কি যায় আসে? এখানে তো কাজটাই আসল, আর সেটাই আমরা করে ছাড়বো।’’
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা সহায়ক বিষয় নিয়ে কাজ করে বিদ্যানন্দ। এছাড়াও তাদের এক টাকায় আহার নামের প্রকল্পও বেশ পরিচিত।