চোখ ধাঁধিয়ে দেয় ঢাবি ছাত্র উসামার ক্যালিগ্রাফি
সুন্দর হাতের লেখা দিয়ে এবার নাম ছড়িয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উসামা হক। বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষার ক্যালিগ্রাফিতে সমান দক্ষতা তাঁর। দেশের সাতটি প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছেন। ভিনদেশে এক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বেও জায়গা করে নিয়েছিলেন।
আরবি বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়ছেন উসামা। তিন ভাই-এক বোনের মধ্যে উসামাই সবার বড়। থাকেন গাজীপুরে। তৃতীয় শ্রেণি থেকে ছবি আঁকতেন সময় পেলেই। তাঁর ক্যালিগ্রাফি শেখার শুরু আহমদ রেজা ফারুকীর কাছে।
রেজা তাঁকে অক্ষর গড়া, শব্দ তৈরি, বাক্যবিন্যাস আর রঙের ব্যবহার শিখিয়েছেন। উসামা এরপর নিসার উদ্দিন জামিল ও আব্দুর রহিমের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছেন। দেশের নামি ক্যালিগ্রাফার মাহবুব মুর্শিদের কাছেও শেখার সুযোগ পেয়েছেন।
নিউ ইয়র্কে এক মসজিদের জন্য তাঁর চারটি ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং নেওয়া হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের এবারের (২০২০ সাল) ক্যালেন্ডারটি উসামার ক্যালিগ্রাফি দিয়ে করা হয়েছে। উসামা ২০১৯ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী আয়োজিত প্রথম জাতীয় ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন।
একই বছর মইনিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত দশম জাতীয় ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতায়ও প্রথম হয়েছেন। উসামা দোহায় অনুষ্ঠিত ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড শীর্ষক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছিলেন।
উসামা যেকোন ভাষায় ক্যালিগ্রাফি ফুটিয়ে তুলেন। তবে কোরআনের আয়াতগুলোর ক্যালিগ্রাফি খুবই সুন্দর হয়। উসামা বাংলা ক্যালিগ্রাফিও করেন। অনেকে বিয়েতে নবদম্পতির নাম ক্যালিগ্রাফি করে উপহার দিতে চান।
উসামার অনেক কাজ জনপ্রিয় হয়েছে। বলছিলেন, আরবি ক্যালিগ্রাফির মধ্যে ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা’ লেখাটি খুবই জনপ্রিয় হয়। এটি টিউন অব আর্ট নামের আন্তর্জাতিক শিল্প উত্সবে প্রদর্শিত হয়েছে ২০১৯ সালে। ‘আমি বাংলায় কথা কই’ আমার আরেকটি সাড়া জাগানো কাজ। এই লেখার ফন্টস্টাইল (লিখনশৈলী) আমার নিজের তৈরি। এতে বিশেষত্ব থাকায় মাহবুব মুর্শিদ স্যার অনেক প্রশংসা করেছেন।
‘বাংলাদেশে নবীন যেসব শিল্পী ক্যালিগ্রাফি পেইন্টিং চর্চা করছেন, উসামা হক তাঁদের অন্যতম। ক্যালিগ্রাফির প্রায় সব পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া উসামার জানা, বিশেষ করে খত বা লিপির আকার-আকৃতি ও রং লেপনে উসামা খুব পারদর্শী। চীনের ক্যালিগ্রাফার হাজি নুর দীন মি গুয়াংজিয়াং বলেন, ‘উসামার সুলুস খতের (আরবি লেখার একটা স্টাইল) হাত ভালো, এটা নিয়ে লেগে থাকলে আরো ভালো করবে।’ ক্যালিগ্রাফার আব্দুর রহিম বলেন, ‘উসামার কাজে সাবজেক্ট ও অবজেক্ট, ফন্ট ও মোটিফ, কালার ও শেড ইত্যাদির ভারসাম্য দেখার মতো।’
ফেসবুকে উসামার পেজের নাম Haque Art Gallery এখানে কাজের আদেশপত্র (অর্ডার) দেওয়া যায়। উসামার কাজ দেখারও সুযোগ মিলবে এখানে। আদেশপত্র পেলে তিনি অর্ধেক টাকা অগ্রিম নেন। তবে উসামার মা-বাবা ছেলেকে এ পেশায় দেখতে চাননি; কিন্তু উসামার আগ্রহ আর একাগ্রতার কাছে তাঁরা হার মেনেছেন। এখন বরং উত্সাহ দেন।
উসামা ক্যালিগ্রাফি করছেন প্রায় ১৫ বছর হতে চলল। তবে পেশা হিসেবে নিয়েছেন বছর দুয়েক হবে। তিনি বিজনেস কার্ডের কাজও করে থাকেন। আরবি, বাংলা ছাড়া ইংরেজি ক্যালিগ্রাফিও করেন।
উসামা বলছিলেন, ‘ক্যালিগ্রাফি রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব। ক্যালিগ্রাফিতে তুরস্ক, ইরান, মিসর এগিয়ে। আমাদের এখানেও ভালো কাজ হচ্ছে। অন্য অনেক দেশের শিল্পীরা আমাদের কাজ থেকে প্রেরণা নেন। বিদেশের বাজার ধরতে পারলে এ কাজ দিয়ে ভালোভাবে জীবন নির্বাহ সম্ভব।’ উসামা বেশি বেশি কাজ করতে চান; কারণ তিনি বেশি বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে চান। বলছিলেন, ‘একদিন আমি এ পৃথিবীতে থাকব না; কিন্তু আমার কাজ বেঁচে থাকবে। মানুষের মনকে অভিভূত করবে।’
এছাড়া দেশে ক্যালিগ্রাফি শেখার কোনো প্রতিষ্ঠান না থাকায় বিষণ পীড়া দেয় এই ক্যালিগ্রাফার উসামাকে ।