প্রযোজকের মৃত্যুতে ইলিয়াস কাঞ্চনের কান্না
১৯৮৯ সালে আনন্দমেলা চলচ্চিত্রের ব্যানারে নির্মিত হওয়া সুপারহিট ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমার প্রযোজক আব্বাস উল্লাহ মারা গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় এই প্রযোজক মৃত্যুর পর থেকেই চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একই সঙ্গে প্রযোজকের মৃত্যুতে কাঁদছেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
প্রযোজক আব্বাস উল্লাহর মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। বনানীর বিখ্যাত চেয়ারম্যান বাড়ির চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদের পুত্র আব্বাস উল্লাহ শিকদার। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন রেখে গেছেন।
জানা গেছে, রোববার (১৯ জানুয়ারি) বাদ জোহর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ির মাঠে আব্বাস উল্লাহর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। তাকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রযোজকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘একসন সৎ, উদার মানুষ ছিলেন আব্বাস উল্লাহ ভাই। পয়সাওয়ালা ছিলেন, কিন্তু কোনো অহংকার ছিল না। মানুষকে সম্মান করতেন তিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আব্বাস উল্লাহ ভাই মেধার মূল্যায়ন করতেন। একজন সুপারস্টারকে যে স্পেসটা দিতেন রাইজিং স্টারকেও সেভাবে সম্মান দিতেন। তাকে দেখেছি বন্ধুর মতো, তাকে পাশে পেয়েছি ভাইয়ের মতো। তার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত দান করেন। তার পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রইলো।’
আব্বাস উল্লাহর স্মৃতিচারণ করে একুশে পদক প্রাপ্ত এই অভিনেতা বলেন, ‘আব্বাস উল্লাহ ভাই ছিলেন চলচ্চিত্রের অন্তপ্রাণ একজন মানুষ। বহু সুপারহিট চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন। কিছু সিনেমা পরিচালনা করেছেন। তিনি অসংখ্য সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। আমরা একসঙ্গে অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। অনেক অনেক স্মৃতি আছে আমাদের।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। আজ বারবার মনে পড়ছে সেই দিনগুলোর কথা। স্ত্রী জাহানারাকে হারিয়ে আমি যখন দিশেহারা তখন আমার পাশে ছিলেন আব্বাস উল্লাহ ভাই। আমার স্ত্রীর দাফনসহ যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা তিনি করেছেন। বনানী কবরস্থানে জাহানারার জন্য কবর কিনে দিয়েছিলেন। আমার জন্যও কবর কিনে রেখেছেন। আজ সেই মানুষটা নেই, তাকে কবরস্থানে নিয়ে যেতে হবে!’
নিজের ক্যারিয়ারে আব্বাস উল্লাহর অবদান স্বীকার করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আব্বাস উল্লাহ ভাই ভালো সিনেমা বানানোর চেষ্টা করতেন। দর্শকের চাহিদা বুঝতেন। তিনি ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ নির্মাণ করে ইতিহাস করেছেন। আমি ইলিয়াস কাঞ্চনকেও ইতিহাসের নায়ক বানিয়েছেন। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ একটা ইতিহাস। আমার গর্ব হয় এই সিনেমার নায়ক হিসেবে। আমার বন্ধু, ভাই, প্রযোজক আব্বাস উল্লাহ ভাইয়ের প্রতি চিরকাল আমি কৃতজ্ঞ। তার কাছে আমাদের সিনেমারও অনেক ঋণ আছে।’
মোজাম্মেল হক বকুল পরিচালিত ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৯ সালে। আনন্দমেলা চলচ্চিত্রের ব্যানারে নির্মিত এই সিনেমা দেশব্যাপী আলোড়ন তোলে। তৈরি করেছে ঢালিউডের শীর্ষ আয় করা সিনেমার ইতিহাস। এটিকেই ইন্ডাস্ট্রির সর্বোচ্চ আয়ের সিনেমা হিসেবে অভিহিত করা হয়। আজও যে রেকর্ড ভাঙতে পারেনি কোনো সিনেমা।
উল্লেখ, ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবির দুই প্রযোজক ছিলেন মতিউর রহমান পানু ও আব্বাস উল্লাহ শিকদার। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টায় মারা গেছেন তাদের একজন আব্বাস উল্লাহ।