সাকিব-ধোনি ভোটে বিশ্বাসযোগ্যতা হারালো ক্রিকইনফো
ইএসপিএন ক্রিকইনফো সম্প্রতি ১৬ তারকা ক্রিকেটার নিয়ে দশকসেরা খেলোয়াড়ের একটি পোল আয়োজন করেছে। ওই পোল বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন সাকিব আল হাসান। এ পোলে সাকিবের সর্বশেষ প্রতিপক্ষ ছিলেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। যার ফলাফল নিয়ে চলছে বর্তমানে অনেক আলোচনা-সমালোচনা। উঠেছে ওয়েবসাইটটির নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন।
সাকিব ও ধোনির ভোটাভুটিতে বড় ধরণের লড়াই হবে তা আগে থেকেই ধারণা করা যাচ্ছিল। তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে লড়াইয়ে অধিকাংশ সময়ে এগিয়ে ছিলেন সাকিব আল হাসান। ধোনির হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেন ভারতের বেশ জনপ্রিয় তারকারা। এর পরেও সাকিব এগিয়ে ছিলেন।
ক্রিকইনফোর পোলে ভোট দেওয়ার সময় ছিল গত ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা পর্যন্ত। ঠিক সেই সময় পর্যন্ত সাকিব ৫১ ভাগ ভোট পেয়ে গিয়েছিলেন পোল জয়ের জন্য। তবে মুহূর্তের মাঝেই তা হয়ে যায় ৫০ ভাগ ধোনির পক্ষে আর ৫০ ভাগ সাকিবের পক্ষে। সাধারণত ৪৯.৫ এর উপরে ভোট চলে গেলে বড় পোলগুলোতে ৫০-৫০ ভাগ দেখানো হয়।
ওয়াই এক্স মাসুম নামে একজনে ফেসবুকে মন্তব্য করেছেন, ভোট শেষ হইছে ১ টায়। তখন সাকিব ছিলো ৫১% ধোনি ৪৯%। ১ টা বাজার সাথে সাথে ৫০% ৫০% হয়ে গেছে, তখন ভোট বন্ধ ছিলো। তারপরেও দেখি ভোট অটো কাউন্ট হচ্ছে।
ধোনির ভোট শেষ সময়ে ৪৯.৫ থেকে বেড়ে ৪৯.৫১ হলেও মোট হিসেবে সাকিবের জয়ের কথা। তবে ঠিক কত শতাংশ ও কার পক্ষে কতগুলো ভোট পড়ল তা ক্রিকইনফোর পোলে দেখানো হয়নি। তবে কে কতগুলো ভোট পেয়েছে সেই নির্দিষ্ট সংখ্যাটা দেখালে আরো পরিষ্কার হওয়া যেত।
তবে সবাইকে অবাক করে দিয়ে দেখানো হয় বাংলাদেশ সময় ১টা বাজার পর মোট ভোট সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোট গ্রহণের নির্ধারিত সময় দুপুর ১টা পরও মোট ভোট বৃদ্ধি পায়। ১টা বাজার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সাকিব এগিয়ে থাকার পরও শেষ পর্যন্ত সময়ের বাইরে গিয়ে ভোট বৃদ্ধি করার সুযোগ খোলা রাখে ক্রিকইনফো। অবশেষে ধোনিকেই বিজয়ী ঘোষণা করে ক্রিকইনফো কর্তৃপক্ষ কোন প্রকার ঘোষণা ও কারণ দর্শনো ছাড়াই।
এ নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তদের মনে প্রশ্ন ক্রিকইনফোর মতো বৈশ্বিক ওয়েবসাইটও কি তাহলে বিশ্বাসযোগ্যতা হারালো? একটি আনঅফিসিয়াল পোলে জয় বা হার বড় কথা না। ধোনি ও সাকিব দুইজনই ক্রিকেটের লিজেন্ড সারির খেলোয়াড়। কে বড় বা কে ছোট সেটাও এখানে ব্যাপার নয়। এই পোল জিতলে বা হারলে ধোনি বা সাকিব কেউ বড় বা ছোট খেলোয়াড় হয়ে যাবে না। প্রশ্ন হচ্ছে ক্রিকইনফোর মতো ওয়েবসাইটের নিরপেক্ষতা নিয়ে। একটি ভোট আয়োজন যার ফলাফল স্বচ্ছভাবে দেওয়া উচিত। কিন্তু তা না করে তারা সময় শেষ হওয়ার পরও ভোট গ্রহণ অব্যাহত রেখে একজনকে জয়ী ঘোষণা করা কতটুকু ঠিক?
৫০-৫০ এ পোল শেষ হওয়ার পর চূড়ান্ত ভোট কতটি পেয়েছে তা না জানিয়ে সরাসরি ধোনিকে বিজয়ী ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েও প্রশ্ন দর্শকদের মাঝে।
একই সময় আরো অন্যান্যদের মাঝে ভোটাভুটি চললেও ক্রিকইনফোর পেজ থেকে বারবার ধোনি ও সাকিবের পোলের কথা পোস্ট দিয়ে সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যখনই ধোনি পিছিয়ে ছিলেন। প্রশ্ন উঠতে পারে শুধু এই পোল নিয়েই এত পোস্ট কেন ছিল। ক্রিকইনফো তাহলে কি ধোনিকে জয়ী দেখানোর উদ্দেশ্য ছিল?
ভারতের সবচেয়ে ২ জনপ্রিয় ক্রিকেটার কোহলি ও ধোনির প্রতিযোগী এই ভোটাভুটিতে এমন ভাবেই নির্ধারিত করা হয়েছে যাতে ফাইনালের আগে কোহলি ও ধোনির দেখা না হয়।
তবে ভক্তদের মনে ওঠা এই প্রশ্নগুলোর জবাব ক্রিকইনফো হয়তো দিবে না। তবে এই পোলের ফলাফলের পর ক্রিকইনফোর গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশের ভক্তদের কাছে অবশ্যই কমে যাবে। সাকিব ও ধোনি ২ জনই যার যার দেশে ও নিজ নিজ ক্যাটাগরিতে খেলোয়াড় হিসেবে লিজেন্ড হয়ে থাকবে।