সাকিবকে দফায় দফায় প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারতীয় জুয়াড়ি দীপক
২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসরে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলেছিলেন সাকিব। সাকিব জানতেন, তাঁরই পরিচিত কোনো এক ব্যক্তি দীপক আগারওয়াল নামের এক ভারতীয় জুয়াড়িকে তাঁর ফোন নম্বর দিয়েছেন। এরপর থেকেই দাফায় দফায় সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি।
ম্যাচ না পাতিয়েও আইসিসির কাছ থেকে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন সাকিব। সাকিবের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, এক ভারতীয় জুয়াড়ি তাঁকে অনৈতিক প্রস্তাব দিলেও তিনি সেটি আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকে জানাননি। জুয়াড়ি দীপকের কাছ থেকে কী এমন প্রস্তাব পেয়েছিলেন সাকিব? কি কথা হতো তাদের দুজনের? আইসিসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
এদিকে জুয়াড়িদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবের কথা আইসিসিকে না জানানোয় দুই বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে এক বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। যার মানে, ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবরের আগে আর ক্রিকেট মাঠে ফিরতে পারছেন না সাকিব।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়েকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের সময় দুজনের মধ্যে আবারও বার্তা আদান-প্রদান হয়। ১৯ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচসেরা হওয়ার পর সেদিনই সাকিবকে অভিনন্দন জানিয়ে খুদে বার্তা পাঠান আগারওয়াল। এর পরপরই তিনি সাকিবের উদ্দেশে আরেকটি বার্তা পাঠান।
সেটি হলো ‘কাজটা কি এখনই হবে, নাকি আমি আইপিএল পর্যন্ত অপেক্ষা করব?’ এখানে ‘কাজ’ বলতে মূলত দলের ভেতরের খবর পাচার করাকে বুঝিয়েছেন আগারওয়াল। কিন্তু আগারওয়ালের কাছ থেকে পাওয়া এই প্রস্তাবের কথা আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট (এসিইউ) বা অন্য কোনো দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে জানাননি সাকিব। যদিও এ ব্যাপারে আগারওয়ালের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান ছাড়া আর কিছুই করেননি বাংলাদেশ তারকা।
চার দিন পর ২৩ জানুয়ারি আগারওয়ালের কাছ থেকে আরও একটি বার্তা পান সাকিব। সেখানে আবারও দলের ভেতরের খবর ফাঁস করার জন্য সাকিবকে প্রস্তাব দেন তিনি। ওই খুদে বার্তায় আগারওয়াল লেখেন, ‘এই সিরিজের ব্যাপারে কোনো তথ্য পেতে পারি?’ দ্বিতীয়বার একই ব্যক্তির কাছ থেকে এই প্রস্তাব পেলেও এবারও এসিইউ বা অন্য কোনো দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাকে কিছুই জানাননি সাকিব।
ত্রিদেশীয় সিরিজে পাওয়া চোট কাটিয়ে ওঠার পর আইপিএলে খেলতে যান সাকিব। ২৬ এপ্রিল সানরাইজার্সের হায়দরাবাদের হয়ে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে মাঠে নামেন সাকিব। সেদিন হোয়াটসঅ্যাপে আবারও সাকিবকে বার্তা পাঠান আগারওয়াল। সানরাইজার্সের একজন নির্দিষ্ট খেলোয়াড় ওই ম্যাচে খেলবেন কি না, এ ব্যাপারে সাকিবের কাছে জানতে চান তিনি। এ ছাড়া দলের ভেতরের আরও কিছু খবরও জানতে চান আগারওয়াল। সেদিন আগারওয়ালের সঙ্গে বেশ অনেকক্ষণ ধরে কথা হয় সাকিবের। আগারওয়াল সাকিবের কাছে তাঁর ডলার অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। জবাবে সাকিব বলেন, তিনি আগে আগারওয়ালের সঙ্গে দেখা করতে চান।
আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে সাকিব স্বীকার করেছেন, ২৬ এপ্রিল সেই ‘চ্যাটিং’য়ের কিছু অংশ তিনি ফোন থেকে ডিলিট করে দেন। দলের ভেতরের খবর জানতে চেয়ে যেসব বার্তা পাঠিয়েছিলেন আগারওয়াল, সেগুলোই ডিলিট করেন সাকিব। তবে সাকিব এমনটাও বলেছেন, সেদিনের কথোপকথনের পরেই আগারওয়ালের ব্যাপারে তাঁর সন্দেহ হয়। আগারওয়াল যে একজন জুয়াড়ি, সে ব্যাপারেও সন্দেহ হয় তাঁর। তবে আশ্চর্যজনকভাবে এবারও এসিইউকে পুরো ঘটনার কিছুই জানাননি সাকিব।
সাকিব এসিইউ কাছে বলেছেন, আগারওয়ালের দেওয়া কোনো প্রস্তাবেই রাজি হননি তিনি। আগারওয়ালের প্রস্তাব অনুযায়ী দলের ভেতরের কোনো তথ্য ফাঁস করেননি, এমনটাও আইসিসিকে জানিয়েছেন সাকিব। আগারওয়ালের কাছ থেকে নগদ অর্থ বা অন্য কোনো উপহার নেননি তিনি। কেবল এসিইউকে না জানানোর কারণেই দুই বছরের এই নিষেধাজ্ঞা পেলেন সাকিব।
আরও দেখুন: সাকিবের নিষেধাজ্ঞায় প্রেরণার বাণী শিশিরের
সাকিবও নিজের দায় অস্বীকার করেননি। ভুল করেছেন জানিয়ে বলেছেন, ‘যে খেলাটি ভালোবাসি, সেখান থেকে নিষিদ্ধ হয়ে আমি অবশ্যই অসম্ভব কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু আমার কাছে অনৈতিক প্রস্তাব আসার পরও না জানানোর ফলে আমার শাস্তি আমি মেনে নিয়েছি। আইসিসির দুর্নীতিবিষয়ক কমিটির দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই খেলোয়াড়দের ওপর নির্ভর করে। এ ঘটনায় আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারিনি।’