বাংলাদেশী হামজা যেভাবে ইংলিশ তারকা ফুটবলার
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটিতে খেলেন ফুটবলার হামজা চৌধুরী। তাঁর মা বাংলাদেশী, বাবা গ্রানাডিয়ান। বাংলাদেশে যারা ইউরোপিয়ান ফুটবল নিয়ে খোঁজ খবর রাখেন তাঁরা হামজা চৌধুরীর সাথে আগে থেকেই পরিচিত। লেস্টার সিটির যুব দল থেকে উঠে আসা এই মিডফিল্ডার সম্প্রতি মূল দলে থিতু হয়েছেন।
চলতি মৌসুমে নিয়মিত শুরুর একাদশে জায়গা পাচ্ছেন হামজা। দক্ষিণ এশিয়া বংশোদ্ভূত দুজন ফুটবলার এখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলছেন। একজন লেস্টার সিটির হামজা, অন্যজন নেইল টেইলর, যিনি অ্যাস্টন ভিলার হয়ে খেলছেন।
হামজা তার উত্থান নিয়ে একটা কথা বেশ কৃতজ্ঞতার সুরে বলেছেন, সেটা হলো ব্রিটিশ-এশিয়ান কমিউনিটিতে যারা ফুটবল ভালোবাসেন তারা হামজাকে সবসময় সমর্থন করেছেন। ইংলিশ লিগগুলোতে হাতেগোনা কয়েকজন এশিয়ান ফুটবলার থাকা সত্ত্বেও এই সমর্থন হামজাকে অনুপ্রাণিত করে।
ওয়েস্ট ব্রমে দুজন খেলতেন, আদিল ও সামির নাবি, ইয়ান ঢান্ডা খেলেতন লিভারপুলে, ভিলায় ছিলেন ইসাহ সুলিমান, ইয়ানের সাথে আমার এখনো যোগাযোগ রয়েছে, বলেন হামজা।
হামজা তার এই ক্যারিয়ারের পেছনে তার বাংলাদেশী মা রাফিয়া, তার সৎবাবা মুরশিদ এবং তার চাচা ফারুকের ত্যাগের কথা স্বীকার করেন। তাদের ত্যাগের প্রতিদান হামজা দিয়েছেন ২০১৭ সালে, যখন সে প্রথমবারের মতো লেস্টার সিটির হয়ে মাঠে নামেন, তৎকালীন ম্যানেজার ক্রেইগ শেকসপিয়ারের অধীনে ইএফএল কাপে বদলি হিসেবে ম্যাচ খেলেন হামজা।
এরপর ম্যানচেস্টার সিটির সাথে ১-১ গোলে ড্র, আর্সেনালের সাথে ৩-০ গোলের জয়ে মিডফিল্ডার হিসেবে যে ভূমিকা রাখেন, তা দলে জায়গা পাকা করতে সাহায্য করে। চলতি মৌসুমে প্রতি ম্যাচেই মাঠে নামছেন হামজা চৌধুরি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আট ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ৩ নম্বরে অবস্থান করছে লেস্টার সিটি।
হামজার ছোটবেলার বড় অংশ জুড়ে তার মা রাফিয়া, যার পৈত্রিক নিবাস দেওয়ানবাড়ি। জায়গাটি হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নে।
‘আমি চুল কাটতে খুব অপছন্দ করতাম, আমার মা আমাকে জোর করে নিয়ে যেতেন, আমি ছোট ছিলাম, এখন আমি চুল বড় হতে দেই’ , বলেন হামজা।
লেস্টারের খেলার সময় মাঠে হামজার উপস্থিতি চেনার অন্যতম উপায় ঝাকড়া চুল। হামজার মা একদিন ছেলেকে নিয়ে লোবোরো বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, সেখানে ফুটবলের একটা আয়োজন ছিল, হামজার বক্তব্য অনুযায়ী সেটাই ছিল শুরু।
‘আমার মা নতুন ও ভিন্ন মতামতের প্রতি উদার, সেদিন আমি প্রথম খেলতে যাই এবং মা সিদ্ধান্ত নেন খেলা চালিয়ে যাবো আমি।’
ছোটবেলায় হামজা হবিগঞ্জের গ্রামে আসতেন, সেসময়কার কথা মনে আছে তাঁর। ‘আমি বাংলাদেশে যা খুশি তা করতে পারতাম, রাত ১০টায় ছোট ছোট বাচ্চারা ঘুরে বেড়াতো, আমি বাংলা বলতে পারি, এটা জেনে মানুষ আসলেই বেশ অবাক হতো।’
প্রতি বছরেই হামজা বাংলাদেশে আসতেন, দুই বা তিন সপ্তাহ থাকা হতো। ‘আমার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে আমি অবগত, আমি আবার যেতে পারলে ভালো লাগতো, এটা আমাকে আরো বিনয়ী করে তোলে, আমি ইংল্যান্ডে থাকলে আমার মধ্যে কিছু ব্যাপার কাজ করতে পারে, কিন্তু পৃথিবীর নানা প্রান্ত যেভাবে সংযুক্ত হয় সেটা আসলেই বিনয়ী করে তোলে।’
হামজা চৌধুরি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী, স্কুল ছাড়াও ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে পড়ালেখা করতেন তিনি। ‘আমি ও আমার ছোটবোন মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার কোরান শরীফ পড়া শিখতাম’, বলেন হামজা।
‘আমি ড্রেসিং রুম থেকে বের হবার সময় আয়াত-উল-কুরসি পড়ি, আমি আরো ছোট ছোট দোয়া পড়ি যেগুলো আমার মা আমাকে শিখিয়েছেন। আমার মা অনেক শক্তিশালী একজন নারী, যিনি আমাকে শিখিয়েছেন, কিভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতি সামলাতে হয়।’ বিবিসি বাংলা।