বাংলাদেশে আরো একবার ‘অটোপাস’ দেয়া হয়েছিল

  © ফাইল ফটো

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার সকল শ্রেণীতে অটোপাস দেয়া হয়েছিল। অর্ধশতক পর আবারো সংকটে পড়েছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। যুদ্ধের পর পরীক্ষা ছাড়াই অটো প্রমোশনে শিক্ষার্থীরা শুরু করেন থেমে যাওয়া শিক্ষা জীবন। জাতীয় অধ্যাপক প্রয়াত ড. আনিসুজ্জামান তার ‘বিপুলা পৃথিবী’ বইয়ে লিখেছেন, তখনকার শিক্ষামন্ত্রীর অটোপাসের সিদ্ধান্তে তিনি ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ একমত ছিলেন না।

এদিকে দেশে দ্বিতীয়বারের মত এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার বাতিল করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এসব শিক্ষার্থীর এইচএসসি বা সমমানের ‘ফল’ নির্ধারণে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার ফল বিবেচনায় করা হবে। তবে পাস করবে সবাই। সেক্ষেত্রে গত বছরের উচ্চ মাধ্যমিকে অংশ নিয়ে যারা উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই ফেল করা শিক্ষার্থীদের এ বছর পাস করার জন্য আর পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে না।

১৯৭১ সালে দেয়া অটোপাসের বিষয়ে আনিসুজ্জামান তার বইয়ে লিখেছন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী হওয়ার আগেই বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে ইউসুফ আলী যে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছিলেন, সে কথাটা এখানে বলে নিই। পরিকল্পনা কমিশনের থেকে শিক্ষা বিষয়ে আমি যে কয়েকটি কাগজ তৈরি করেছিলাম, তার কটিতে প্রস্তাব করা হয়েছিল যে, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ যে যে ক্লাসে পড়ত, ১৯৭২ সালের ১ মার্চে তাকে আবার সেখান থেকে পড়াশােনা শুরু করতে হবে।

এই একটি বছর জাতীয় ক্ষতি হিসেবে পরিগণিত হবে; এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়ঃসীমা এক বছর বাড়িয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু মন্ত্রিসভায় এ প্রস্তাব বিবেচিত হওয়ার আগেই জাতীয় পরিষদ সদস্য ইউসুফ আলী এক জনসভায় ঘােষণা করেন যে, স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণউন্নতি দেওয়া হলাে। অর্থাৎ ১৯৭১ সালে যে যেখানে পড়ত, ১৯৭২ সালে তার পরবর্তী শ্রেণিতে সে উন্নীত হবে।

এই ঘোষণার বিষয়ে তিনি যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করেননি, সে কথা আমি তাজউদ্দীনের কাছ থেকে জেনেছিলাম।

বলা বাহুল্য, ঘোষণাটি ছাত্রদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়েছিল এবং তা প্রত্যাহার করার মতাে সাহস সরকারের হয়নি। এতে যে দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে কী সর্বনাশ হলো, অনেকে তা ভেবে দেখেননি। এই কারণে ইউসুফ আলীর প্রতি মনটা বিমুখ হয়ে থাকলেও তার আহ্বানে তাঁর দপ্তরে গিয়েছিলাম বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা সম্পর্কে আলােচনা করতে’’।

এ বছর যাদের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল, তারা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০১৮ সালে। ওই বছর ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪ জন। এর মধ্যে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ১০৪ জন, তথা ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছি।

আবার এই শিক্ষার্থীরা জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই পরীক্ষায় ৯ বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল ২৪ লাখ ১২ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছিল ১৯ লাখ ২৯ হাজার ৯৯ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। একই ব্যাচ এইচএসসিতে এসে শতভাগ ‘পাস’ করার গৌরব অর্জন করবে।

তবে এবারে এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ার সিদ্ধান্তে হতাশা বোধ করলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে এটিকেই যথাযথ সিদ্ধান্ত বলছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

তারা বলছেন, পরীক্ষা দিয়ে একটা ফল পাওয়া আর না দিয়ে এ ধরনের মূল্যায়ন দুটো একেবারেই ভিন্ন অনুভূতি। দুবছর ধরে প্রস্তুতি নিয়েছি, এখন এসে সেটার মূল্যায়ন হবে না ভাবতেও ভালো লাগছে না। কিন্তু এটাও ভাবতে হচ্ছে, এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতি না। এখন সবার জীবন নিয়ে ভাবতে হবে আগে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিটা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।


সর্বশেষ সংবাদ