এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ শিথিলতা দেখাবে মন্ত্রণালয়
- শিউলী রহমান
- প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২০, ১২:১২ PM , আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০, ০৩:৫৪ PM
করোনাভাইরাসের কারণে কয়েক দফায় অন্তত ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সর্বশেষ দফায় আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় স্থগিত হয়ে গেছে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও। গত ১ এপ্রিল চলতি বছরের এই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। তবে করোনাভাইরাসের কারণে তা স্থগিত হয়ে যায়।
ফলে দিন যাওয়া সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদেরও উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ এই পরীক্ষার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ছাড়াও উচ্চশিক্ষা, বিদেশে পড়াশোনার মতো আরও অনেক বিষয় জড়িত। সবমিলিয়ে চাপ বাড়ছে সরকারেরও। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলেও এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অবশ্য মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্থগিত হওয়া এইচএসসি ও সমমানের বোর্ড পরীক্ষা দিতে চান না বলে জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীদের একটি অংশ। এ ব্যাপারে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। স্মারকলিপিকে ‘১৪ লাখ শিক্ষার্থীর পক্ষে’ লেখা দাবি করে সেখানে, পরীক্ষার্থী ও মহামারির গতিবিধির সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে পরীক্ষা না পিছিয়ে দ্রুততম সময়ে বিকল্প ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
এছাড়া করোনাকালে পরীক্ষা না নেয়ার দাবিতে ফেসবুকে একটি হ্যাশট্যাগও ছড়িয়ে পড়েছে। বোর্ড পরীক্ষার বিকল্প কী— জানতে চাইলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা দুটি বিকল্প প্রস্তাবের কথা জানান। প্রথমত- জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে এইচএসসির গ্রেড প্রদান। দ্বিতীয়ত-অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া। তবে গ্রেড প্রদান করাটাই ‘বেটার অপশন’ বলে মনে করছেন তারা।
এদিকে সূত্র জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্ভাব্য পরিকল্পনা মোতাবেক আগামী নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পরীক্ষা নেয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলোও। মহামারির কারণে পরীক্ষা দ্রুত শেষ করতে নানা উপায় নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদে পরীক্ষা নিতে প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থী বসানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এবার ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর জন্য জেড আকৃতিতে বসাতে প্রায় পাঁচ হাজার কেন্দ্র প্রয়োজন হবে। সে প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, করোনার কারণে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ শিথিলতা দেখাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে সব বিষয়েই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ থেকে মুক্ত করতে প্রত্যেক বিষয়ে পূর্ণ নম্বর কমানো হবে। পরীক্ষা আয়োজনে দুটি বিকল্প সামনে রাখা হয়েছে। প্রথমত, প্রতি বিষয়ে ৫০ শতাংশ নম্বর কমানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ব্যাবহারিক না থাকা বিষয়গুলোতে পূর্ণ মান ৫০ শতাংশ করে কমানোর চিন্তা আছে।
আর ব্যবহারিকসহ বিষয়গুলোয় ব্যাবহারিক নম্বর ঠিক রেখে এমসিকিউ ও সৃজনশীল নম্বর ৫০ শতাংশ কমানো হবে। অন্য প্রস্তাবে এমসিকিউ কিংবা সৃজনশীল অংশের যেকোনো একটি পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রেও ব্যাবহারিকের নম্বর ঠিক রেখে নম্বর সমন্বয় করা হতে পারে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট কলেজকে ব্যাবহারিক নেয়ার অনুমতি দেয়ার প্রস্তাবও রয়েছে। পরীক্ষা শুরুর পর সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি বাদে প্রতিদিন পরীক্ষা হতে পারে।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বোর্ডগুলো। তবে বিষয় কমানোর কথা নাকচ করে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আজ মঙ্গলবারই এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন বলে সূত্র জানায়। এছাড়া মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সার্বিক বিষয় বিবেচনা করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্ত শিক্ষা বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশনা পাব, সে অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুত রয়েছি।’
করোনায় স্থগিত হওয়া চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে সে সিদ্ধান্ত চলতি সপ্তাহে জানিয়ে দেবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গত বুধবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, এইচএসসি পরীক্ষার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সোমবার (৫ অক্টোবর) বা মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) জানিয়ে দেয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেছিলেন, মন্ত্রণালয়ের একটি সভা রয়েছে। সেটার পর আমরা এই পরীক্ষার ব্যাপারে একটি সুনির্দ্দিষ্ট ধারণা দিতে পারবো। শিক্ষার্থীরা যাতে প্রস্তুতি নিতে পারেন সে জন্য অন্তত চার সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষার সময় সূচি প্রকাশ করবে। সে মোতাবেক আজ-কালের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষামন্ত্রীর কথামতো নির্দিষ্ট সময়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার কিংবা বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ বিষয়ে সাংবাদিকদেরকে বিস্তারিত জানিয়ে দেওয়া হবে। দ্রুত এই পরীক্ষা শেষ করতে চায় সংশ্লিষ্টরা।
সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। গত মার্চের শুরুতেই কিছু বোর্ডের প্রশ্ন মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়। নতুন করে প্রশ্ন ছাপানোর সুযোগ না থাকায় আগের প্রশ্নেই পরীক্ষা হবে। আংশিক নম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে কেন্দ্র সচিবদের তা পরীক্ষার দিন জানিয়ে দেওয়া হবে।