৪০তম বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রস্তুতি
৪০তম বিসিএস’র প্রিলিমিনারি পরীক্ষার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের বুকের ধুকপুকানিও সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে একটু আধটু বাড়ছে। এই সময়ে নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত ও স্থির রাখার চেষ্টা করুন। রাখে আল্লাহ মারে কে? প্রস্তুতি যদি ভাল হয় তবে আপনার প্রিলিমিনারি পাস কেউ ঠেকাতে পারবে না ইনশাল্লাহ। পরীক্ষার আগে কোচিংয়ে মডেল টেস্ট দিতে গিয়ে কম নম্বর পেয়ে অনেকের আত্নবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকে। পরীক্ষার আগ মুহূর্তে কোচিংয়ে দৌড়াদৌড়ি না করে নিজে পড়াই ভাল।
প্রিলিমিনারিতে ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গণিতে সব পারলাম কিন্তু ইংরেজিতে কিছুই পারলাম না তাহলে কিন্তু বিপদ। প্রতিটি বিষয়ে একটা এভারেজ নাম্বার তুলতে পারলে আপনি যে অবশ্যই প্রিলিমিনারি পাস করবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তবে তার জন্য যা পাচ্ছি তাই গিলছি টাইপ মনোভাব পরিহার করতে হবে। প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এ সময়টাতে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করুন। বাজারে এখন বিভিন্ন প্রকাশনীর রকমারি ডাইজেস্ট পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের বই পড়লেই ১৫ দিনে খাল পার!! এমন প্রলোভনও অনেকে দেখাচ্ছে। এসব প্রলোভন থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। খুব বেশি হলে প্রতিটি বিষয়ের একটি গাইড বইয়ের সাথে ভাল মানের একটি ডাইজেস্ট আর কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিশেষ সংখ্যাটি আপনার সংগ্রহে রাখতে পারেন। কোয়ানটিটি নয় কোয়ালিটির উপর গুরুত্ব দিন। বিসিএসের বিভিন্ন প্রকাশনীর যত বেশি বই পড়বেন তত বেশি বিপদে পড়বেন। কারণ কোনটা ছেড়ে কোনটা পড়বো করতে করতে শেষ পর্যন্ত কোনটাই আর আপনার ভালভাবে পড়া হবে না। এই মুহুর্তে ইংরেজি, বাংলা, গনিত, বিজ্ঞানের উপর সবচেয়ে বেশি জোর দিন।
ইংরেজি গ্রামার এতদিনে যা পড়া হয়েছে তা বারবার রিভিশন দিন। নতুন করে আর কিছু পড়তে যাবেন না। সাহিত্য পার্ট থেকে যা পড়া হয়নি আর দেরি না করে পড়ে ফেলুন।গ্রামার দাগাতে গিয়ে অনেকসময় কনফিউশনেরর কারণে ভুল হয়ে যায় কিন্তু সাহিত্যে এ ধরনের সম্ভাবনা নেই। তাই এখন ইংরেজি পড়ার সময় সাহিত্যের ক্ষেত্রেই একটু বেশি সময় দিন।
বাংলার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই করুন। ব্যাকরণ যা পড়া হয়েছে তা বারবার রিভিশন দিন।সমার্থক শব্দ, বিপরীত শব্দ, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ এসব এক ঘন্টা পড়ার চেয়ে সাহিত্য এক ঘন্টা পড়লে আপনি বেশি মার্কস কমন পাবেন। তাই সময় বেশি নেয় কিন্তু প্রশ্ন কম আসে এমন বিষয় এই মুহূর্তে একটু কম পড়ুন।
গণিতে বীজগণিত, পাটিগণিতের পাশাপাশি জ্যামিতিতেও একটু ভালভাবে গুরুত্ব দিন। কারণ এটা মানসিক দক্ষতার ক্ষেত্রেও আপনাকে কাজে দিবে। স্বল্প সময়ে উত্তর বের করার জন্য বেশি বেশি গণিত প্র্যাকটিস করুন। গণিতে ভাল করতে পারলে আপনি প্রতিযোগিতার দৌড়ে অনেকখানি এগিয়ে যাবেন।
বিগত বছরের প্রশ্ন থেকে বিজ্ঞান, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তিতে অনেক কমন পড়ে।বিগত বছরের প্রশ্নগুলো বারবার পড়ুন। বিজ্ঞানে এসময় একটু বাড়তি গুরুত্ব দিলে আপনার উপকার বৈ ক্ষতি হবে না।
বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিকে বিসিএসের সাথে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো কখনোই পড়তে যাবেন না। ডোনাল্ড ট্রাম্প কোন ব্রান্ডের সিগারেট খায় কিংবা সৌদি আরবের বাদশাহর কতজন বেগম আছেন!! এসব প্রশ্ন জীবনেও বিসিএসে আসবে না। এই ধরনের তথ্য পড়া থেকে বিরত থাকুন। এসব তথ্য আপনার মাথা ভারী করে মূল প্রস্তুতিকে ব্যাহত করবে। তাই এসব পরিহার করে শুধু গুরুত্বপূর্ণ জিনিষগুলো বেশি বেশি পড়ুন। যেমন —সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গ সংগঠন এবং বিভিন্ন সংস্থা প্রভৃতি।
অতিসাম্প্রতিক বিষয়গুলো বিসিএসে আসে না বললেই চলে, আসলেও মাত্র দুই এক মার্কসের এসে থাকে। তাই অতিসাম্প্রতিক প্রশ্ন আপনি বাদ দিয়ে দিলেও খুব বেশি সমস্যায় পড়বেন না। কারণ এখানে যে সময়টা দিবেন ওই সময়টা বিজ্ঞানে দিলে অনেক মার্কস বেশি কমন পাবেন।
ভূগোল থেকে ৫ মার্ক এমনিতেই কমন পাবেন। বাড়তি একটু পরিশ্রম করলে দশে দশও পেয়ে যেতে পারেন। আর নৈতিকতা, সুশাসন ও মূল্যবোধ বিষয়টা আমার কাছে ছেড়ে দে মা তো কেঁদে বাঁচি অবস্থার মতই মনে হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যতটা না কঠিন তার চেয়ে বেশি কঠিন মনে হয় এ সম্পর্কিত বিসিএসের প্রশ্নগুলো (তাই এ টপিকের এত ভিতরে না গিয়ে ভাসাভাসা পড়ুন। ৪ থেকে ৫টা প্রশ্ন এমনিতেই কমন পেয়ে যাবেন।এইখানে বেশি খাটলেও আপনি ওই ৪ থেকে ৫ই কমন পাবেন। তাই এ সময়টা ইংরেজি কিংবা বাংলাতে দিন কাজে লাগবে।
পরিশেষে বলতে চাই প্রিলিমিনারি পাস করা খুব সহজও না আবার খুব কঠিনও না।মেধা, পরিশ্রম আর ধৈর্যের সাথে কৌশলের সংমিশ্রন ঘটাতে পারলে আল্লাহ আপনাকে এ প্রতিযোগিতায় উতড়ে দিবেনই ইনশাল্লাহ। সকলের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
আরো দেখুন: জীবনের গল্প: বাবার সম্মান রক্ষায় এএসপি দিদার নূর
লেখক: এএসপি, ৩৭তম বিসিএস
মেধাক্রম-৮