সিআরবির শিরীষতলায় গাছ কেটে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি গুজব?
চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ভবন (সিআরবি) এলাকায় হাসপাতাল তৈরির প্রকল্প নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য উঠে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। গত (১৪ জুলাই) ড. হাছান মাহমুদ এমপি নামক একটি ফেসবুক পেজে ‘চট্টগ্রামের সিআরবি শীরীষতলায় গাছ কেটে হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়টি গুজব। গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না।’ এমন ক্যাপশন দিয়ে সিআরবি এলাকার শিরীষতলার একটি ছবি দিয়ে বানানো একটি পোস্টার শেয়ার করা হয়।
জানা যায়, হাসপাতাল প্রকল্পটি সিআরবি এলাকার শিরীষতলায় নয়, বরং সিআরবি এলাকার মধ্যেই অন্য পাশে গোয়ালপাড়া অংশে নির্মিত হবে। সেখানে রেলওয়ের একটি হাসপাতাল রয়েছে বর্তমানে। তবে নির্মিতব্য হাসপাতাল এলাকায় শতবর্ষী শিরীষগাছ রয়েছে এবং সেখানে হাসপাতাল নির্মাণ করতে ২০টিরও বেশি শতবর্ষী শিরীষ গাছসহ ছোটবড় মিলে শতাধিক গাছ কাটার প্রয়োজন পড়বে। গুগল ম্যাপেও রেলওয়ে হাসপাতালের জায়গায় বড় বড় গাছের ছবি দেখা যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, গবেষক ও কবি কামরুল ইসলাম বাদল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস ফ্যাক্টচেককে বলেন, ‘হাসপাতালটি সিআরবির রেলওয়ে হাসপাতালের যে স্থানে হচ্ছে সেই জায়গায় অন্তত ২৫টি শতবর্ষী শিরীষ গাছ রয়েছে। সেগুলোসহ একশটির বেশি গাছ কাটা পড়বে। তবে ভাল কোনো প্রকল্প বা উদ্যোগে গাছ কাটা পড়বে তা নিয়ে আপত্তি করছি না আমরা। যে বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত, এখানে বেসরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হলে সিআরবি এলাকার প্রতিবেশগত বিপর্যয় ঘটবে।’
বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং ইউনাইটেড গ্রুপ-এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) চুক্তি অনুযায়ী, ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ এবং ৫০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে সিআরবি এলাকায়।
১৮৯৫ সাল থেকে তৎকালীন ব্রিটিশ বেঙ্গল রেলওয়ের সদরদপ্তর এবং বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদরদপ্তর সিআরবি। সবুজ গাছগাছালিযুক্ত মনোরম পরিবেশের সিআরবি এলাকায় কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে যান চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দারা। এখানে ১৯৭ প্রজাতির উদ্ভিদ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন আছে। ফলে হাসপাতাল প্রকল্পটির বিরোধিতা করছেন অনেকে। প্রায় দিনই চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন সিআরবি এলাকায় মানববন্ধন বা প্রতিবাদ সমাবেশ করছে। এদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ডরিফরম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এ নিয়ে সরকারের কাছে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও হাসপাতাল প্রকল্পটির বিরোধিতা করছে। গত ১৫ জুলাই প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘সিআরবিতে হাসপাতালের বিরোধিতা করল চসিক’ শিরোনামের খবরে এমনটি জানা যায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (সিডিএ) হার্ডলাইনে গেছে। তারাও চাইছে না সেখানে হাসপাতালটি বাস্তবায়িত হোক। সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস চট্টগ্রামের মহানগর নিউজকে বলেন, ‘সরকারের আমলারা গত দুই তিন বছর ধরে পরিকল্পনা করে প্রকল্পটি করেছেন কিন্তু একবারও সিডিএর সঙ্গে বসেননি। চট্টগ্রামের মাস্টারপ্ল্যানের গাইডলাইনে এটা খোলা জায়গা হিসেবে নির্ধারিত আছে। এটাকে কালচারাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বলা আছে, এখানে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা করা যাবে না।’
সম্প্রতি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে এক লেখায় কামরুল ইসলাম বাদল বলেন, ‘সরকারি জায়গা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ছেড়ে দিয়ে চিকিৎসা বাণিজ্যিকরণের প্রতিবাদ করছেন চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনেরা। এ প্রকল্পের বিরোধিতা যারা করছেন তাদের উন্নয়নবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করলে অন্যায় হবে।’
এদিকে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বলেন, ‘শহরের প্রানকেন্দ্রে এই দৃস্টিনন্দন সবুজ জায়গায়, পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে এই উন্মুক্ত জায়গায় যেনো অবকাঠামো নির্মাণ না হয়, এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কোনোভাবেই উন্মুক্ত জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে না।’