১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৭:২০

শতাধিক দেশের হাজারো পুরনো মুদ্রার সংগ্রহ স্কুলপড়ুয়া ছাত্রের!

কিছু পুরনো মুদ্রা ও জিনিসপত্রের সঙ্গে শিক্ষার্থী মাহির ইয়াসির  © সংগৃহীত

চাঁপাইনবাবগঞ্জের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর নাম মাহির ইয়াসির। তার প্রধান শখ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা নিজের সংগ্রহে রেখে দেওয়া। শখের বশে এ কাজ করে এপর্যন্ত ১২০টি দেশের প্রায় ২হাজারেরও বেশি পুরনো মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন তিনি। মুদ্রা ও প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস সংরক্ষণে আগ্রহী মাহিরকে এ কাজে উৎসাহ দিচ্ছেন তার পরিবার ও বন্ধুরা। 

জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর এলাকার জালিবাগান গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে মাহির এখন পড়াশোনা করছে রহনপুর এবি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।

আরও পড়ুন: মিস আমেরিকা বিজয়ী কোরিয়ান বংশোদ্ভূত এমা ব্রয়েলস

তার পরিবার জানিয়েছেন, মাহির যখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তখন তার পরিবার বাসা বদল করে নতুন আরেকটি বাড়িতে ওঠেন। বাড়ির আসবাবপত্র পরিবর্তন করার সময় পুরোনো একটি সিন্দুক দেখতে পান তারা। মাহির সিন্দুকটি খুলতে নাছোরবান্দার মতো পরিবারের কাছে বায়না ধরে। কিন্তু চাবি খুঁজে না পেয়ে তার বাবা সিন্দুকটির তালা ভেঙে ভেতরে ২৪টি ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন শাসকের রৌপ্য মুদ্রা এবং ৮০-৯০টি তাম্র মুদ্রা দেখতে পান। জমিয়ে রাখা মুদ্রাগুলো ওই বাড়ির পূর্বপুরুষদের সংগ্রহ ছিল। মূলত এই মুদ্রাগুলো দেখার পর থেকেই মাহিরের মধ্যে মুদ্রা সংগ্রহের তীব্র আগ্রহ জন্মায়। তবে মাহির ছোট থাকায় আবদার করা সত্ত্বে মুদ্রাগুলো দিতে রাজি হননি তার বাবা। তখন থেকে মাহির বাইরে থেকে মুদ্রা সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এই মুদ্রা সংগ্রহ করতে তাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এ কাজ করতে ভালো লাগে বলে অনেক সময় অর্থের বিনিময়েও তিনি মুদ্রা সংগ্রহ করেছেন। একটু বড় হওয়ার পর তার বাবা সিন্দুকের মুদ্রাগুলো তাকে দিয়ে দেন।

এ প্রসঙ্গে মাহির জানিয়েছেন, ‘এগুলো সংগ্রহ করা আমার নেশা। আগের হারিয়ে যাওয়া জিনিজপত্র দেখতে আমার ভালো লাগে। তবে এগুলো সংগ্রহের জন্য আমাকে সবসময় যোগাযোগ রাখতে হয়।’

বিভিন্ন জায়গার জুয়েলার্সে ঘুরে ঘুরেও অনেক সময় মুদ্রা সংগ্রহ করেন মাহির। এভাবে গেল ১০ বছরে ১২০টি দেশের প্রায় দুই হাজারের মতো মুদ্রা সংগ্রহ করেন তিনি । এরমধ্যে কিছু দেশের  বিলুপ্ত মুদ্রাও রয়েছে।

আরও পড়ুন: বিবাহিতদের সিট বাতিল ইস্যুতে আন্দোলনে যাচ্ছে ছাত্রসংগঠনগুলো

মাহিরের এই শখের কথা জানতে পেরে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরাও তাদের কাছে থাকা মুদ্রাগুলো তাকে দিয়ে দেন। এমনকি পরিচিত কেউ যারা বিদেশে আছেন তারাও অবস্থানরত ওই দেশসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করে তাকে দিয়ে থাকেন। এভাবে বিদেশি মুদ্রা সংগ্রহ করতে করতে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন সাম্রাজ্যগুলোর মুদ্রা সংগ্রহের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। তার কাছে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় ৩০টি বিলুপ্ত সাম্রাজ্যের মুদ্রা রয়েছে। যার সংখ্যা প্রায় তিন শতাধিক হবে।

এ বিষয়ে মাহির ইয়াসিরের বাবা মোবারক হোসেন বলেছেন, ‘আগে এসব করতে মানা করলেও ও শোনেনি। তবে আমি এখন তাকে উৎসাহ দিই, সহযোগিতা করি। পড়ালেখার পাশাপাশি তার এ ধরনের শখের বিষয়টি অনুকরণীয়।’

আরও পড়ুন: মুঠোফোনেরও জাদুঘর চালু, থাকছে ভার্চ্যুয়াল ভ্রমণের সুযোগ

গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস জানিয়েছেন, কেউ যদি শখের জন্য মুদ্রা সংগ্রহ করেন তাহলে সেটি বেআইনি নয়। তবে কেউ যদি ব্যবসার জন্য সংগ্রহ করে থাকেন তাহলে অবশ্যই তিনি আইনের আওতায় পড়বেন।

গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, মাহিরের মুদ্রা সংগ্রহের বিষয়টি তার জানা নেই। তবে বিষয়টির খোঁজ নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, মুদ্রা ছাড়াও মাহির ইয়াসিনের সংগ্রহে রয়েছে পুরোনো বিভিন্ন জিনিসপত্র। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পুরোনো টেলিভিশন, বিভিন্ন দেশের দিয়াশলাই, পাথরের প্লেট, হ্যাচাক লাইট, হারিকেন, ব্রিটিশ আমলের কলস, পুরোনো ক্যামেরা, ব্রিটিশ আমলের বাটখারা, পাথরের তৈরি অস্ত্র, পোড়ামাটির ফলক, পুরোনো টর্চলাইট, রত্নপাথর, কাসার গ্লাসসহ বিভিন্ন সময়ের জিনিসপত্র।