ঢাবির শতবর্ষ উদযাপনে গবেষণাধর্মী নাট্য মঞ্চস্থ করছে থিয়েটার বিভাগ

‘উদয়ের পথে এই আলোকতীর্থে’ শীর্ষক গবেষণাধর্মী বিশেষ নাট্য মঞ্চস্থ
‘উদয়ের পথে এই আলোকতীর্থে’ শীর্ষক গবেষণাধর্মী বিশেষ নাট্য মঞ্চস্থ  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ মঞ্চে নিয়ে আসছে ইতিহাস পাঠ ও মানবতার মুক্তি বিষয়ক গবেষণাধর্মী বিশেষ নাট্য পরিবেশনা।

‘উদয়ের পথে এই আলোকতীর্থে’ শীর্ষক গবেষণাধর্মী বিশেষ নাট্য পরিবেশনাটিতে ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরের ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে শুরু করে উঠে এসেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম, বৃটিশ বিরোধী আন্দলন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক শাষন, স্বৈরাচারী শাষন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারসহ নানান যৌক্তিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় অবদান।

পরিবেশনাটিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান, গণসংগীত, মুক্তিরগানসহ আরও ৩টি মৌলিক গানের ব্যাবহার করে পরিবেশনাটিন গল্পের কাঠামো তৈরী করা হয়েছে। একই সাথে পরিবেশনারটির অন্তর্গত চিন্তা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে নাকাড়া, ঢোল, খোল, কংগো, বাঁশি, মন্দিরা, গং, কাহন ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র।

বিভাগের শিক্ষক নাভেদ রহমনের নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় বিভাগের স্নাতকোত্তর এবং স্নাতক অষ্টম, ষষ্ঠ, চতুর্থ ও দ্বিতীয় সেমিস্টারে অধ্যয়নরত ৫৬ জন শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে এই গবেষণাধর্মী নাট্য পরিবেশনাটি নির্মিত হয়েছে।

এই পরিবেশনাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানের ৩য় দিন (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হবে।

বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়নের মূল ভাবনা ও সমন্বয়ে বিভাগের স্নাতকোত্তর বর্ষে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের গবেষণায় ‘উদয়ের পথে এই আলোকতীর্থে’ পরিবেশনাটির পাণ্ডুলিপি নির্মাণ ও সূচনা সংগীত রচনা করেছেন শংকর কুমার বিশ্বাস। পরিবেশনাটির সমাপনী সংগীতসহ দুটি মৌলিক গান রচনা করেছে বিভাগের শিক্ষক শাহমান মৈশান।

পরিবেশনাটিতে সুর, সংগীত ও পোশাক পরিকল্পনা করেছে কাজী তামান্না হক সিগমা, চলন, দেহ বিন্যাস ও কোরিওগ্রাফি করেছে অমিত চৌধুরী, মহড়া ও আবহ সংগীত তত্ত্বাবধান করেছে মনোহর চন্দ্র দাস। পাশাপাশি, মহড়াটিতে সার্বিক তত্ত্বাবধান ও অনুপ্রেরকের ভূমিকা পালন করেছে তানভীর নাহিদ খান।

নাট্য পরিবেশনাটির নির্দেশক নাভেদ রহমান বলেন, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত হয়ে পঞ্চাশ বছর আগে বাংলাদেশ নামক যে রাষ্ট্রটির জন্ম হয়, তার পেছনে চেতনার স্ফুরণ হিসেবে দৃপ্ত ভূমিকা পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক- বাংলাদেশের যেকোন উত্তাল সময়ে বাধঁ হিসেবে দাঁড়িয়েছে দেশের এই প্রবীণ প্রতিষ্ঠান। ৫২’র ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরশাসকের পতন, যুদ্ধাপরাধীর বিচারসহ প্রতিটি সংকটেই দৃপ্ত ভূমিকা রেখেছে ১৯২১ সালে জন্ম নেয়া এই প্রতিষ্ঠান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ এবং বাংলাদেশের অর্ধশতবর্ষ একই বৃন্তে মিলিত। আর এই মিলনকে শ্রদ্ধা জানাতেই আমাদের এই প্রচেষ্টা।'

‘উদয়ের পথে এই আলোকতীর্থে’ শীর্ষক পরিবেশনাটির পান্ডুলিপি নির্মাণ প্রসঙ্গে শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, উদয়ের পথে শতবর্ষের আলোক তীর্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোতে আলোক শিখার উপরে সর্বদা জ্বলজ্বল একটি শ্লোগান। ‘শিক্ষাই আলো’। শতবর্ষের সেই প্রদীপ্ত আলোক বিচ্ছুরিত জ্ঞানালোকের অন্তরালে কত জ্ঞানী-গুণী, মনীষী-মহাজনের অবদান রয়েছে। তাঁদের নির্দেশিত সত্য দর্শনের অভিজ্ঞতায় উদয়পথ অনুসরণে, স্মৃতির স্মরণে, আনন্দ-উদযাপনে এই পরিবেশনার পাণ্ডুলিপি ও সূচনাগীত সৃজনের মূল অনুপ্রেরণা এবং পাণ্ডুলিপি বিনির্মাণে মাস্টার্সে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীবৃন্দের গবেষণা প্রধান ভূমিকা বহন করে। এই সৃজনশীল ঐতিহাসিক কর্মে আমার কলমের কালি ও চিন্তার যোগসূত্র ঘটাতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। '

পরিবেশনাটির আবহসংগীত পরিকল্পনার বিষয়ে বিভাগের শিক্ষক কাজী তামান্না হক সিগমা বলেন, এই বিশেষ নাট্যপরিবেশনায় সংগীত, সুর ও আবহসংগীত পরিকল্পনা করতে গিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে সংগীতই এই পরিবেশনার প্রাণ। বাঙ্গালির লড়াইয়ের ইতিহাসের সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক সম্পৃক্ততা এবং বাঙ্গালির স্বাধীনতা ও মানবতার মুক্তি বিষয়ক এই পরিবেশনায় নজরুলের গান, গণসংগীত, মুক্তিরগানসহ আরও ৩টি মৌলিক গানের ব্যাবহার করেছি। গল্পের বুনন ও চিন্তা প্রকাশের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহারিত হয়েছে নাকাড়া, ঢোল, খোল, কংগো, বাঁশি, মন্দিরা, গং, কাহন ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। এ সকল বাদ্যযন্ত্রের সাথে সংগীতের যুগপৎ পথচলার মাধ্যমে মনচপীঠে রচিত হয়েছে কখনও বিপ্লবের ডামাডোল, আবার কখনও রচিত হয়েছে কুহকী মূর্ছনায় ভেসে যাওয়া আবেগ।

পরিবেশনাটির কোরিওগ্রাফার অমিত চৌধুরী বলেন, এই পরিবেশনার পাণ্ডুলিপিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে বর্তমান বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের আলোকগাঁথা কীর্তির কথা, উক্ত পরিবেশনাতে শিল্পীদের শারীরিক ভাষা তথা দেহবিন্যাস নির্মাণের ক্ষেত্রে অতীতের উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহের নির্দিষ্ট কিছু চিত্রের ভাণ্ডার তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলস্বরূপ ঘটনা বহুল তৎকালীন সময়ের বেশ কিছু মুহূর্ত দিয়ে কোরিওগ্রাফির মাধ্যমে দেহ চলনের কাজটি নির্মিত হয়েছে।

নাট্য পরিবেশনাটির প্রধান সমন্বয়ক ও বিভাগের চেয়ারম্যান আশিকুর রহমান লিয়ন বলেন, সাংস্কৃতিক মুক্তির উপরেই নির্ভর করে একটি দেশের আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়ন। এই মুক্তির সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিরকাল অটুট। তারই ধারাবাহিকতায় থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ শুধুমাত্র আনন্দ ও শিল্পরস আস্বাদনের জন্য নয় বরং এই জাতির ইতিহাস, রাজনীতি, উন্নয়ন ও মুক্তির কথা আমলে রেখে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এরই একটি ধারাবাহিক রূপ হলো এই বিশেষ নাট্য পরিবেশনা।


সর্বশেষ সংবাদ