২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৮

ডেসপাচ: অনুসন্ধানী সাংবাদিক আর অনৈতিক সম্পর্কের গল্প

সিনেমার একটি দৃশ্যে মনোজ বাজপায়ী  © সংগৃহীত

একদিকে দাম্পত্য জীবনের অশান্তি, অন্যদিকে জীবিকা অর্জনের জন্য ব্যবহৃত পরিকাঠামোতে গভীর পরিবর্তন। এই দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে কানু বহেল পরিচালিত থ্রিলার ছবি ডেসপাচ। ছবিটি  ২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে তৈরি। ছবির মুখ্য চরিত্র অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপেয়ী।

ডেসপাচ এর গল্প
ছবিতে মনোজ বাজপেয়ী একজন ক্রাইম জার্নালিস্ট। ছবিতে যার নাম জয় বাগ।  তার কর্মস্থল ‘ডেসপ্যাচ’ নামের এক জনপ্রিয় সংবাদপত্র।  এই ছবির ঘটনা এমন এক সময়পর্বের, যখন ছাপা সংবাদপত্রের সমান্তরালে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে উঠে আসছে অন্তর্জাল সংবাদমাধ্যম বা ওয়েব পোর্টাল। তবে ছবিতে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জয় পুরোনো ঘরানার। খবরের শিকড় পর্যন্ত যাওয়া তার স্বভাব। টু–জি স্ক্যামের গোড়ায় পৌঁছাতে চায় সে। 

তবে পেশাগত জীবনে নাছোড়বান্দা সাংবাদিক হলেও ব্যক্তিজীবনে প্রবল খামখেয়ালি জয়। স্ত্রীর সঙ্গে টানাপোড়েন, ব্যক্তিজীবনে শান্তি নেই। খবরের জন্য অনুসন্ধান আর জয়ের ব্যক্তিগত জীবনের টানাপোড়েন - এই নিয়ে এগিয়ে যায় গল্প।

ডেসপাচ সিনেমার ভালো দিক সমূহ

মনোজ বাজপেয়ীর অসাধারণ অভিনয়: মনোজ বাজপেয়ী তার চরিত্রে একদম নিখুঁত অভিনয় করেছেন। তার চরিত্রের মানসিক দ্বন্দ্ব, সংকট এবং বিকাশ দারুণভাবে ফুটে উঠেছে, যা সিনেমার গভীরতা এবং আবেগকে আরও শক্তিশালী করেছে।

গভীর সামাজিক ও রাজনৈতিক বার্তা: সিনেমার মধ্যে ২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির মতো বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে কথা বলা হয়েছে, যা সমাজের দুর্নীতি এবং সরকারের অন্ধকার দিক উন্মোচন করে। তবে, এটা সরাসরি রাজনৈতিক প্রবাহের সাথে না জড়িয়ে, সিনেমায় একটি থ্রিলার আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

থ্রিলার এবং সাসপেন্স: ছবির থ্রিলার উপাদান এবং সাসপেন্স নির্মাণ দর্শকদের পুরো সিনেমাটি ধরে রাখে। দর্শকরা অবিরাম উত্তেজনায় ভুগতে থাকেন, চরিত্রদের সাথে রহস্যময় পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সময়।

গল্পের মৌলিকতা: ডেসপ্যাচ সিনেমার কাহিনি ভিন্ন ধরনের এবং মৌলিক। এটি একটি সাধারণ হিন্দি সিনেমার থেকে আলাদা, যেখানে পরিবারের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলার সাথে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক বিষয় জড়িত।

চরিত্রের জটিলতা: সিনেমার চরিত্রগুলো সোজা-সাপটা নয়, তাদের মধ্যে জটিলতা এবং মনস্তাত্ত্বিক বিবর্তন রয়েছে, যা গল্পের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়। সেগুলো দর্শকদের আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।

ভিজ্যুয়াল এবং সিনেমাটোগ্রাফি: সিনেমার দৃশ্যায়ন এবং ক্যামেরার কাজ বেশ ভালো। বিশেষ করে গল্পের গতি এবং আবেগের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনটি দর্শকদের অনুভূতি এবং থ্রিলের সঙ্গে মিশে যায়।

পেশাদারিত্বের দৃষ্টিকোণ: ছবির বিভিন্ন দিক যেমন স্ক্রিপ্ট, পরিচালনা, এবং অভিনয় পেশাদারিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তৈরি করা হয়েছে, যা ছবিটিকে উচ্চমানের করে তুলেছে। 

ডেসপাচ-এর দুর্বলতা 

‘ডেসপাচ’ অনেকটাই মন্থর গতির ছবি । যে মন্থরতার কোনো ব্যাখ্যা নেই। একটা সময় পর মনে হয়, এ ছবিতে নির্মাতা আসলে ঠিক কী দেখাতে চেয়েছেন, তিনি নিশ্চিত তো? ছবিতে স্ক্যামকে নিয়ে আসা হয়েছে কোনো রাজনৈতিক যোগ ছাড়াই। এটা কেন, সেটাও ঠিকঠাক প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি নির্মাতা। পুরো ছবিতে অনেকগুলো ধোঁয়াশার জায়গা তৈরি করেছেন কানু বেহেল।  যেগুলোর কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাও দেননি তিনি। ছবির গল্পে আরও ধার প্রয়োজন ছিল। সাংবাদিক ও অপরাধজগতের লুকোচুরি খেলা আরও একটু জমলে মন্দ হতো না।

নগ্ন মনোজ 
সবাইকে চমকে দিয়ে ‘ডেসপাচ’-এ কয়েকটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করেছেন তিনি। একটি দৃশ্যে  তাকে পুরোপুরি নগ্ন দেখানো হয়েছে। ছবির প্রচারে অভিনেতা জানিয়েছেন, এ ছবি চূড়ান্তভাবে তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। ফলে চাইলেও এ ছবির কথা তিনি ভুলতে পারবেন না। এ ছবির জন্য তিনি রূপক ও আক্ষরিক—দুইভাবেই নগ্ন হয়েছেন।

কেন দেখবেন ডেসপাচ?
বেশ কিছু দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র মনোজ বাজপেয়ীর অসাধারণ অভিনয় উপভোগ করার জন্যও ডেসপ্যাচ একবার দেখা যায়। যারা প্রচলিত বাণিজ্যিক হিন্দি সিনেমা দেখে ক্লান্ত, তারা ডেসপ্যাচ এর ভিন্ন দুনিয়ায় প্রবেশ করে নতুন স্বাদ পেতে পারেন।

প্রসঙ্গত, ডেসপাচ সিনেমায় আরো অভিনয় করেছেন সোহানা গোস্বামী, অর্চিতা আগরওয়াল, ঋতুপর্ণা সেন প্রমুখ।