কিংবদন্তি তবলাবাদক জাকির হোসেনের জীবনাবসান

জাকির হোসেন
জাকির হোসেন  © সংগৃহীত

উপমহাদেশের কিংবদন্তি তবলিয়া ওস্তাদ জাকির হোসেন। তাকে বলা হয় ‘তবলার জাদুকর’। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে আর ফেরা হলো না এই জাদুকরের। যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) শিল্পীর পরিবারের পক্ষ থেকে তার বোন খুরশিদ আউলিয়া মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন। 

মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যার্থে নিউইয়র্কের মেডিসন স্কয়ারে আয়োজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এ তবলা পরিবেশন করেছিলেন জাকির হোসেনর বাবা ওস্তাদ আল্লা রাখা খাঁ। জাকির হোসেন একাধিকবার বাংলাদেশে এসেছেন, কনসার্টে অংশ নিয়ে দর্শকশ্রোতাদের বিমোহিত করেছেন।

খুরশিদ আউলিয়া বলেন, ‘সান ফ্রান্সিসকো স্থানীয় সময় রবিবার বিকাল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর ৬টা) শান্তিপূর্ণভাবে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। মূলত ভেন্টিলেশনে ছিলেন। সেটির সুইচ অফ করার মধ্যদিয়ে তাকে বিদায় জানাতে হয়েছে।’

জাকির হোসেন দীর্ঘদিন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে তার ব্যবস্থাপক নির্মলা বাচানী এর আগে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন। তিনি পিটিআইকে বলেন, ফুসফুসজনিত জটিলতা নিয়ে দুই সপ্তাহ আগে জাকির হোসেনকে সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের একজন পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয় জাকির হোসেনকে। কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লারাখার প্রথম সন্তান জাকির হোসেনের জন্ম ১৯৫১ সালে ভারতের মুম্বাই শহরে। ৩ বছর বয়স থেকে বাবার কাছে তবলায় তার হাতেখড়ি। ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে প্রথম কনসার্ট। সেই থেকে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে। তিনি তার বাদ্যশৈলীর মধ্য দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমের সংগীতজগৎকে খুব কাছাকাছি আনতে পেরেছেন।

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন জাকির হোসেন। ১৯৭০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। শুরু হয় তার আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে বিচরণ। ১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড অ্যালবামে অংশগ্রহণ তাকে এনে দেয় এক বিরাট স্বীকৃতি। তার পর থেকেই বহু খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী যেমন জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, ভ্যান মরিসন, জো হেন্ডারসনসহ আরও অনেকের সঙ্গে তবলা পরিবেশন করেন তিনি।

সংগীতে তার কর্মজীবনের সিংহভাগজুড়ে রয়েছে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীত। তবলায় তিনি সংগত করেছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, শিব কুমার শর্মা বা কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজকে। ১৯৯২ সালে জাকির হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোমেন্ট রেকর্ড’৷ এর মাধ্যমে তিনি সংগীতানুরাগীদের উপহার দিয়েছেন ভারতের ধ্রুপদি সংগীতের খ্যাতিমান সেরা সংগীতশিল্পীসহ সমকালীন বিশ্বসংগীত। ২০০৬ সালে ‘মোমেন্ট রেকর্ড’–এর মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালবাম ‘গোল্ডেন স্ট্রিং অব দ্য সরোদ’ গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, গ্র্যামি ছাড়াও আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জাকির হোসেন।


সর্বশেষ সংবাদ