চলে গেলেন কবি হেলাল হাফিজ

কবি হেলাল হাফিজ
কবি হেলাল হাফিজ  © সংগৃহীত

প্রেম ও বিদ্রোহের কবিতার জন্য বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নানা অসুখ-বিসুখে ভোগছিলেন। চিকিৎসা নিচ্ছিলেন বিভিন্ন হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন এই কবি।

শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হেলাল হাফিজ দীর্ঘদিন ধরে গ্লুকোমায় আক্রান্ত ছিলেন। পাশাপাশি কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস ও স্নায়ু জটিলতায় ভুগছিলেন।

হেলাল হাফিজের মৃত্যুর বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী। তিনি বলেন, কবি হেলাল হাফিজ শাহবাগে একটি হোস্টেলে থাকতেন। সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয়। 

১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণার বারহাট্টায় হেলাল হাফিজের জন্ম। সেখানে স্কুল-কলেজের পড়াশোনা শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে ১৯৭২ সালে দৈনিক পূর্বদেশে সাংবাদিকতা শুরু করেন হেলাল হাফিজ। পূর্বদেশ ও দৈনিক দেশ পত্রিকায় তিনি সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন। তার সর্বশেষ কর্মস্থল ছিল দৈনিক যুগান্তর।

প্রথম কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে হেলাল হাফিজ যে আলোড়ন তুলতে পেরেছেন তা এখনও ইতিহাস হয়ে আছে। তার ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থটি ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অসংখ্য সংস্করণ হয়েছে। যা এর আগে বাংলাদেশের কোনো কবিতার বইয়ের বেলায় ঘটেনি।

হেলাল হাফিজ সারা জীবনই কবিজীবন যাপন করে গেছেন। কবিতার যন্ত্রণাকে বুকে ধারণ করে চিরকুমারের জীবনে থেকেছেন। ব্যক্তি জীবনকে বৈষয়িকতা থেকে দূরে রেখেছেন। কবিতাকে ভালোবেসেছেন সবকিছুর চেয়ে বেশি। কবিতার জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পাঠকের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। 

‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’—উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় তার রচিত কবিতা 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়'র এ পঙক্তি দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যেমন, তেমনি এখনও প্রেরণা জুগিয়ে চলেছে প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে।

কবিতায় অসামান্য অবদানের স্মারক হিসেবে হেলাল হাফিজকে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা।

‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থই হেলাল হাফিজকে দিয়েছে অসামান্য খ্যাতি। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো বই বের করেননি তিনি। ২০১২ সালে ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ কাব্যগ্রন্থের কবিতার সঙ্গে কিছু কবিতা যুক্ত করে প্রকাশ করা হয় তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। সর্বশেষ ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয় তৃতীয় কবিতার বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’।


সর্বশেষ সংবাদ