পৃথিবীর আলো দেখার আগেই শেষ সাজ্জাদের দুই সন্তানের প্রাণ, দাফন চেন্নাইয়ে
অনাগত সন্তানের জন্য প্রস্তুতিই নিচ্ছিলেন অভিনেতা ইরফান সাজ্জাদ ও তাঁর স্ত্রী শারমিন সাজ্জাদ। দুজন মিলে ছেলের নাম রেখেছিলেন প্রিয়, মেয়ের নাম মায়া। কিন্তু তিনি ভাবতে পারেননি তার জীবনের গল্পটা মর্মান্তিক হবে। অনাগত যমজ সন্তান হারিয়ে ভীষণ ভেঙে পড়েছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেতা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অনেক গল্পের শেষটা অন্য রকম দেখেছেন। কিন্তু সেসব গল্পকে যেন হার মানিয়েছে তাঁর বাস্তব জীবনের গল্প। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনাগত দুই সন্তানের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ভালো থেকো আমার ‘প্রিয়’ আর ‘মায়া’। মৃত দুই সন্তানকে চেন্নাইতেই কবর দেন তিনি।
জানা গেছে, অভিনেতার স্ত্রী শারমিন সাজ্জাদ বিগত দেড় বছর ধরেই অসুস্থ। চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। এরমধ্যেই তারা জানতে পারেন, শারমিন অন্তঃসত্ত্বা। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখার স্বপ্ন পূরণ হলো না তাদের। গত ৫ মে গর্ভপাতে অনাগত দুই সন্তানকে হারিয়েছেন এই দম্পতি।
সন্তানদের কবরের সামনে দাঁড়ানো একটি ছবি মঙ্গলবার (২৩ মে) ফেসবুকে পোস্ট করে ইরফান সাজ্জাদ লিখেছিলেন, ‘তাদের নাম রেখেছিলাম প্রিয়া আর মায়া। তারা আল্লাহর বেশি প্রিয় হয়ে গেল…!’
এর এক দিন পর বৃহস্পতিবার (২৫ মে) সন্তানদের কবরের সামনে দাঁড়ানো আরেকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছেন এই অভিনেতা।
ফেসবুক পোস্টে অভিনেতা লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে শুধুমাত্র একটা জিনিসকে মানুষ তার একান্ত নিজের বলতে পারে, তার নিজের সন্তান। আল্লাহ আমাদের একসঙ্গে দুজন দিয়েছিলেন, আবার নিয়েও গেলেন।’ তিনি ভাবতে পারেননি, তার জীবনের গল্পটা এমন মর্মান্তিক হবে। ‘অনেক গল্পে অভিনয় করেছি আমি, নিজের জীবনের গল্প এমন মর্মান্তিক হবে কল্পনা করিনি কখনো। হয়তো জীবনটাই এমন, যেখানে বাস্তবতা কল্পনাকে হার মানায়।
২০২১ সালের শেষের দিকের ইরফান জানিয়েছিলেন, স্ত্রী জটিল রোগে আক্রান্ত। ভারতের চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে গত বছরের প্রথম দিকে শুরু হয় স্ত্রীর চিকিৎসা। কিন্তু শুরুতেই চিকিৎসকদের কথা শুনে ভয় পেয়ে যান ইরফান, ‘আমার স্ত্রী জটিল রোগে আক্রান্ত। আমরা বুঝতে পারি বিষয়টা এতটা জটিল। পরে চিকিৎসকেরা আশ্বস্ত করেন। কিছুটা আশা পাই। তাঁরা পরামর্শ দিলেন, অস্ত্রোপচার করতে হবে।
অনাগত সন্তানের বয়স হয়েছিল ছয় মাস। চিকিৎসক পরামর্শ দেন আপাতত দেশে ফিরে যেতে পারবেন। ৫ মে ফেরার দিন ধার্য হয়। স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় চিকিৎসকদের পরামর্শে দুই মাস পর অস্ত্রোপচার করে দুই সন্তানকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু শেষটা আর পরিকল্পনামতো হলো না।
ইরফান বলেন, ‘ফেরার দিন ভোরে আমার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জরুরি ভিত্তিতে সার্জারি করাতে হয়। সার্জারির এই ছয়–সাত ঘণ্টা যেন আমাদের জীবনের সবকিছু ওটল–পালট করে দিল। আমার সন্তানদের বাঁচানো গেল না।’ কথাগুলো বলার সময় ভেঙে পড়েন এই অভিনেতা, গলাটা ভারী হয়ে আসে। কিছুটা সময় নিয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে একসময় চিকিৎসকেরা জানান, আমার স্ত্রীও বাঁচবে কি না, নিশ্চয়তা নেই।
একের পর এক রক্ত ঝরছে। ১০ ব্যাগ রক্ত লাগে। সবকিছু আমার কাছে দুঃস্বপ্ন মনে হচ্ছিল। অপারেশনের পর চিকিৎসকেরা জানান, আমার স্ত্রীকে বাঁচানো যাবে। এটাও তাঁদের কাছে মিরাকল মনে হয়েছে।’ ৫ মে সেই অস্ত্রোপচারের পর থেকেই চিকিৎসাধীন এই অভিনেতার স্ত্রী। এখন দেশে ফিরে আসাও সম্ভব নয়। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে মৃত দুই সন্তানকে চেন্নাইতেই কবর দেন। স্ত্রী কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর থেকেই শারীরিক মানসিকভাবে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন।
সাজ্জাদ বলেন, ‘এখানে থাকলে আমরা আরও বেশি খারাপ থাকব। আর থাকতে চাচ্ছি না। স্ত্রীর বাকি চিকিৎসা বাংলাদেশে করাব। চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করে সেভাবেই ব্যবস্থা নিয়েছি। মাঝেমধ্যে চেন্নাইয়ে আসতে হবে।’ দু–এক দিনের মধ্যেই তাঁদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে।