জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় শেষ হয়ে গেছে: ফারুকী
খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার এবং নাট্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। নাটক-বিজ্ঞাপন দিয়ে শোবিজে পরিচালক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। বেশকিছু ভিন্নধর্মী ও দর্শকপ্রিয় মেগা ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া ‘ব্যাচেলর’ চলচ্চিত্রটি পরিচালনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর আজ ৫০তম জন্মদিন। জীবনের বিশেষ দিনটি উদযাপন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ সময় শেষ হয়ে গেছে।
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ৫০তম জন্মদিনটি স্ত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা, একমাত্র মেয়ে ইলহাম নুসরাত ফারুকীসহ কয়েকজন মিলে কেক কেটে উদযাপন করেছেন। তারই কয়েকটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন ফারুকী।
ফেসবুক ভেরিফায়েড প্রোফাইলে ছবিগুলো পোস্ট করে ফারুকী লিখেছেন, ‘সারাজীবন আমি বয়স গুনি নাই, গুনছি ব্লেসিংস। আজকে আমার ৫০তম জন্মদিনে এসে তাই পেছন ফিরে নিজেকে একজন কৃতজ্ঞ মানুষই মনে হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ পৃথিবী নামের এই গ্রহে এক চমৎকার জার্নির জন্য আমাকে নির্বাচিত করার জন্য।’ আমার জার্নিটা অন্য আরও কোটি রকম হতে পারতো! হতে পারতাম কীর্তনখোলা নদীর পারের এক উদাসী রাখাল।
কিংবা যাত্রা প্যান্ডেলের টিকিট চেকার। অথবা কোনো এক নির্জন স্কটিশ গ্রামের পাইপার। এর কোনোটাই ভালো বা খারাপ বলছি না। বলছি এই যে বাংলাদেশের একজন গল্পকথক হইছি, হয়ে আমার সময়টাকে গল্পে ধরার চেষ্টা করছি, করতে গিয়ে কতো মানুষের ভালোবাসা পাইছি, কতো মানুষের সাথে কতো ব্রিজ তৈরি করছি, এইসবই একেকটা ব্লেসিংস। তিশার মতো একজন সঙ্গী পাইছি এই জার্নিতে, ইলহামের মতো একটা বেহেশতের টুকরা পাইছি। আমি তাঁর কোনো নিয়ামতকে অস্বীকার করবো?
আজকে পিছনে ফিরে ভাবি, আমি যখন ছবি বানাতে শুরু করি, তখন যেসব রাস্তায় আমি হাঁটা ধরছিলাম, আমি তো পথ হারায়ে ঝরে যেতে পারতাম আরও এক স্বপ্নবান তরুণ হিসেবে। কতো ঝড় গেছিলো, ভাষার ঝড়, অভিনয়ের ঝড়, এমনকি বিষয়ের ঝড়ও। আজকের সময়ে বসে হয়তো বোঝা যাবে না একসময় ন্যাচারাল অভিনয় করাতে চাওয়াটা কতো “আনন্যাচারাল” ছিলো, স্বাভাবিক সংলাপ লেখাটাও কত বড় অপরাধ ছিলো!
আজকের বাংলাদেশি ভিজুয়াল ল্যান্ডস্কেপের দিকে তাকালে সেই সব দিন অবিশ্বাস্যই মনে হয়। হয়তো করা যেতো আরও অনেক কিছুই, আরও অনেক বেটার কিছু, কিন্তু আজকের এই দিনে এসে অপ্রাপ্তির দিকে তাকাইতে চাই না। কারণ যখনই গুনতে বসবেন, জীবনে প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তি বেশিই হবে। গুনতে চাই তাই ব্লেসিংস!
জীবনের দুই-তৃতীয়াংশ পার করে দিয়েছি! ট্রেন যতোদূর যাবে, চাইবো সেটা যেনো মিনিংফুল জার্নি হয় আরও। নতুন নতুন গল্পে দেখতে চাইবো সময়টাকে! আর হ্যাঁ, এমনও হইতে পারে, ছবি বানানোর পাশাপাশি দেখতে পারেন নতুন কোনো ভূমিকায়ও। কারণ জীবন শুরু হতে পারে ফিফটিতেও।
সবাই ভালো থাকবেন। ভালোবাসবেন সবাইকে। গভীরে নামলে দেখবেন, মানুষে মানুষে ঘৃণার আসলে কোনো গভীর কারণই নাই। আমাদের এইসব পার্থক্য সব ওপরের, সকলই কসমেটিক।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)