নিপুন-জায়েদের পূর্ণদৈর্ঘ্য
ঢাকাই সিনেমার বাজার পড়েছে কয়েকবছর আগে। এখন বছরে হাতেগোনা ২০-১২ টি সিনেমা হচ্ছে। নায়ক-নায়িকাদের বহুল প্রচারের পরও সিনেমা হলগুলো ধুকছে দর্শক সংকটে। লগ্নি হারাচ্ছেন প্রজোযকরা।
গত কয়েকবছরে হাতেগোনা কয়েকটি সিনেমা পেয়েছে দর্শকপ্রিয়তা। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েকবছরে দর্শকদের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু দর্শকের রুচি অনুযায়ী সিনেমার গল্প যেমন লেখা হচ্ছে কম, তেমনি পরিচালনা ও শিল্পীদের দূর্বল অভিনয় ভোগাচ্ছে পুরো চলচ্চিত্রাঙ্গনকে।
বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে এখন খুব বেশি আগ্রহ নেই দর্শক মহলে। প্রজোযক, পরিচালক ও অভিনয় শিল্পীরা বিষয়টি অনুধাবন করলেও ইতিবাচক পরিবর্তনে তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে। উল্টো নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দর্শকমহলে নিজেদের অতি স্বস্তাভাবে উপস্থাপন করছেন অনেক শিল্পী।
আরও পড়ুন : কে এই জায়েদ খান, পারিবারিক পরিচয় কী?
বাংলা চলচ্চিত্রের যখন এ হাল তখন ২০২২ সালে এসে সবচেয়ে বেশি বিতর্কের জন্ম দেয় নিপুন-জায়েদের দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্ব সিনেমা কিংবা অভিনয় কেন্দ্রীক নয়। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো বছরজুড়ে বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছে এই দুই শিল্পী। আদালতে গিয়েও এই দ্বন্দ্বের নিরসন হয়নি। বছরজুড়ে এই বিতর্কিত দ্বন্দ্বকে ভালোভাবে নেয়নি দর্শকরা।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা যায়, হাতে কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতা বনে যান চিত্রনায়ক জায়েদ খান। একাধিকবার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকও নির্বাচিত হন তিনি।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি। নির্বাচনে ভোটের কয়েক দিন আগে থেকে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ ও মিশা–জায়েদ প্যানেলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবার মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়।
নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়ী ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হন জায়েদ খান। এর পরেই বাধে বিপত্তি। এর কয়েকদিন পর নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের জন্য নির্বাচনি আপিল বোর্ডের কাছে আবেদন করেন নিপুন আক্তার। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা মেলায় জায়েদ খানের প্রার্থীতা বাতিল করে নিপুনকে জয়ী ঘোষণা করে আপিল বোর্ড।
এ ঘটনায় চিত্রনায়ক জায়েদ খান আদালতে রিট আবেদন করে। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে নির্বাচনি আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এছাড়া এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত করা হয়। একইসঙ্গে প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
আরও পড়ুন : গতকাল আমি জিতেছি, আজ আর্জেন্টিনা জিতবে: নিপুন
২ মার্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
তবে গত ৩ মার্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন নিপুণ আক্তার। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। একইসঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করা হয়।
৮ মার্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে স্থিতাবস্থার আদেশের পরও সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসায় নিপুণ আক্তারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন জায়েদ খান। গত ১৩ মার্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে চেম্বার আদালতের স্থিতাবস্থার আদেশ নিপুণ আক্তার ও জায়েদ খানকে কঠোরভাবে পালন করতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
গত ১৩ নভেম্বর নিপুণের আইনজীবীর সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। ২১ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন : চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সম্পাদক নিপুন: আপিল বিভাগ
রায়ে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ বলে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিপুণের লিভ টু আপিল গ্রহণ করেন আদালত। ফলে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণের দায়িত্ব পালনে বাধা দূর হয়।
আদালতে জায়েদ খানের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। নিপুণের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত জায়েদ-নিপুনের এই দ্বন্দ্ব হাস্যরসের সৃষ্টি করে দর্শক মহলে। অনেকেই প্রস্তাব দেন এই দ্বন্দ্বের কাহিনী নিয়ে সিনেমা বানাবার। যেখানে অভিনয় করবেন জায়েদ খান ও নিপুন আক্তার।