কে এই দিহান
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:০২ PM , আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১, ০৬:৩২ PM
রাজধানীর কলাবাগানে নিজ বাসায় বান্ধবীকে ডেকে এনে ধর্ষণ করে হত্যার অভিযোগে কারাগারে রয়েছেন ফারদিন ইফতেখার দিহান। এরই মধ্যে আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন দিহান।
দিহানের বাসা কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকায়। বাবা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা রেজিস্ট্রার। তিন ভাইয়ের মধ্যে দিহান সবার ছোটো। দিহান তার কিশোরী বান্ধবীর চেয়ে দুই বছরের বড়। জিইডি’র প্রস্তুতি নিচ্ছিল দিহান। গত বছর ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল থেকে 'ও' লেভেল শেষ করে সে।
ময়নাতদন্তে জানা গেছে, ধর্ষণের কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে ওই শিক্ষার্থীর। পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, দিহান ও ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মধ্যে পরিচয় ছিল দুই বছরের। তাদের পরিবারের মধ্যেও জানাশোনা ছিল।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একটি সূত্র বলছে, “দিহানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, প্রায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের দুজনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এই বন্ধুত্বের বিষয়ে তাদের দুই পরিবারের সদস্যরাও অবগত। মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলে পড়া ওই কিশোরীর সঙ্গে দিহানের পরিচয় হয় মেয়েটির এক বান্ধবীর মাধ্যমে। যা একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়।”
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন (ডিসি) বলেন, ‘দিহান ও খুন হওয়া কিশোরীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডিতে তাদের কিছু ছবি পোস্ট করা আছে। তাদের পোস্টগুলো দেখার পর, দিহানের সব কথা অবিশ্বাস করারও সুযোগ নেই। ওই কিশোরীর ও নিজের পরিবারের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আছে বলেও দাবি করেছে দিহান।’
সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল হাসান বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। অভিযুক্তের মা ও দুই ভাইয়ের উপস্থিতিতেই বাসা থেকে আলামত সংগ্রহ করেছি।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘ময়নাতদন্তে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে কিশোরীটির মৃত্যু হয়। এ ছাড়া শরীরের অন্য কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর আগে চেতনানাশক কিছু খাওয়ানো হয়েছে কিনা, সেটা জানার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টের জন্য সপ্তাহ দুয়েক অপেক্ষা করা লাগবে।’
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) রাতে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯-এর ২ ধারায় হত্যাসহ ধর্ষণ মামলা করেন মেয়েটির বাবা। মামলার এজাহারে মেয়েটির বাবা বলেছেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় আমার স্ত্রী অফিসে এবং আমি সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যবসার কাজে বের হয়ে যাই। পরে আমার মেয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় তার মাকে ফোন দিয়ে বলে সে কোচিংয়ের কাগজপত্র আনতে বাইরে যাচ্ছে। দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়ায় তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করিয়েছে। এ কথা শুনে আমার স্ত্রী দুপুর ১টা ৫২ মিনিটের দিকে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারে আমাদের মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে। পরে আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারি দিহান আমার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। দিহান ফাঁকা বাসায় আমার মেয়েকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে সে অচেতন হয়ে যায়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দিহান চালাকি করে আমার মেয়েকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ বা ধর্ষণ পরবর্তী অন্যবিধ কার্যকলাপের ফলে (ধর্ষণের শিকার) নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে, তাহলে ওই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। এর অতিরিক্ত কমপক্ষে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করা হবে।’