ক্যান্সার গবেষণায় তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টা. স্কুলের
বাংলাদেশে ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে গবেষণা কার্যক্রমকে আরও জোরদার করতে তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’ (এনএইচসিএস)। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনজাম আনসার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তহবিল হতে প্রাপ্ত অর্থ প্রদান করা হবে কানাডিয়ান ক্যান্সার কর্মী টেরি ফক্সের দাতব্য সংস্থা ‘টেরি ফক্স ফাউন্ডেশনে’।
তহবিল গঠনের লক্ষ্যে নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের রাজধানীর নিজস্ব ক্যাম্পাসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে; যেখানে তহবিল গঠনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত কানাডিয়ান হাই কমিশনের ট্রেড কমিশনার কাজী গোলাম ফরহাদ, ক্যান্সার অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন অফ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও মহাসচিব ডা. মোহাম্মদ মাসুমুল হক। এনএইচসিএস’র প্রিন্সিপাল ক্রিস্টাল জাউস অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে আয়োজকদের পক্ষ থেকে।
এনএইচসিএসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যথাযথ গবেষণার মাধ্যমে ক্যান্সার ঝুঁকি হ্রাস ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কানাডিয়ান ক্যান্সার কর্মী টেরি ফক্সের দাতব্য ফান্ড গঠন কার্যক্রম ‘ম্যারাথন অফ হোপ’ একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও ফলপ্রসূ উদ্যোগ। গত ত্রিশ বছর ধরে ‘টেরি ফক্স ফাউন্ডেশন’ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে তার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।
‘‘যখন টেরি ফক্সের বাঁচার সম্ভাবনা নিয়ে ভবিষ্যৎ বানী করা হয়েছিল ফিফটি-ফিফটি একই রোগের (অস্টিওসারকোমা) রোগীদের এখন বেঁচে যাবার সম্ভাবনা ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশের লোকজন এখন এক সাথে কাজ করছে ক্যান্সার মুক্ত বিশ্ব নিয়ে টেরি ফক্সের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য।’’
এরই ধারাবাহিকতায় কানাডিয়ান ক্যান্সার কর্মী টেরি ফক্স ও তার ম্যারাথন অফ হোপ স্মরণে এ দাতব্য তহবিল এবং এখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ বাংলাদেশে ক্যান্সার গবেষণা কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পাদিত হলে ক্যান্সার ঝুঁকি সম্পর্কে মানুষ সচেতন হবে এবং দেশে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং আক্রান্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে বলে মনে করে বৃটিশ কলাম্বিয়া, কানাডা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক স্কুল ‘নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল’।
প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বাস করে এর মাধ্যমে কানাডার স্বপ্নবালক টেরি ফক্সের ন্যায় নিউ হরাইজন কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিশুরা ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হবে এবং ফান্ড গঠনে উদ্বুদ্ধ হবে।
প্রসঙ্গত, টের্যান্স স্ট্যানলি ‘টেরি’ ফক্স (২৮ জুলাই ১৯৫৮ - ২৮ জুন ১৯৮১) ছিলেন একজন কানাডিয়ান ক্রীড়াবিদ, মানবহিতৈষী এবং ক্যান্সার গবেষণা কর্মী। গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হলে ক্যান্সার বাসা বাঁধে তার শরীরে এবং তার একটি পা কেটে ফেলতে হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালে কেমোথেরাপির কষ্টকর অভিজ্ঞতা আর ক্যান্সার আক্রান্ত অন্য বাচ্চাদের যন্ত্রণা দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ক্যান্সার গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ তিনি সংগ্রহ করবেন এবং সেই সঙ্গে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবেন।
সেজন্য তিনি সুবিশাল কানাডার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দৌড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজের জীবনবাজি রেখে টেরি ক্যান্সার গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহ করে তহবিল গঠন করেন। ১৪৩ দিনে পাড়ি দেন ৫ হাজার ৩৭৩ কিলোমিটার পথ। তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে প্রদান করা হয় অর্ডার অব কানাডা খেতাব, সর্ব কনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তিনি এই খেতাবটি অর্জন করেন। ক্যান্সার গবেষণায় তার অবদানের জন্য কানাডায় তাকে জাতীয় বীর হিসেবে বিবেচনা করা হয়।