বশেমুরবিপ্রবির কেন্দ্রস্থলে হাইটেক পার্ক, হুমকির মুখে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা
রিজেন্ট বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রস্থলে হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগকে ঘিরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ হাইটেক পার্ক নির্মাণ হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা।
ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণের উদ্যোগে আপত্তি জানিয়ে বিবৃতিও প্রদান করেছে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. কামরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আবু সালেহ সাক্ষরিত বিবৃতিতে দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের স্থানে হাইটেক পার্ক নির্মাণের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানানোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্রতার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, মাত্র ৫৫ একরের স্বল্প আয়তনের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্রে এরকম একটি বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্রতা ও নান্দনিকতা বিনষ্ট হবে, একাডেমিক পরিবেশ চরমভাবে ব্যাহত হবে, ক্যাম্পাসের বাইরের লোকজনের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কলহ বৃদ্ধি পাবে যা একটি দ্বান্দ্বিক অবস্থা তৈরি করবে এবং সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সাথে স্থানীয় অধিবাসীদের সম্প্রীতি ও সম্পর্কের ভারসাম্য নষ্ট করবে।
ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষকবৃন্দ অভিমত প্রকাশ করেন যে, মাষ্টার প্লান অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য ও নান্দনিকতা বজায় রেখে দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের জন্য নির্ধারিত স্থানের পরিবর্তে অন্য কোন স্থানে পরিকল্পিতভাবে আইসিটি পার্ক নির্মাণ করা যেতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আইসিটি পার্ক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে উপকৃত হতে পারে সেই বিষয়গুলো সুস্পষ্ট ভাবে লিখিত থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, প্রতি ঘণ্টায় বাস চান বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
এছাড়া বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাসুকুর রহমান বলেন, ২০১১ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই প্রায় প্রতিবছরই স্থানীয়দের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র ২০১৮-২০২২ পর্যন্ত ৫ বছরেই স্থানীয়দের হামলায় প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগেও বিশ্ববিদ্যালয় গেটের ঠিক অপজিটেই স্থানীয় কর্তৃক তিন শিক্ষার্থী হামলার শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন, এরূপ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রস্থলে গোপালগঞ্জের জন্য বরাদ্দকৃত হাইটেক পার্ক নির্মাণ করা হলে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধ বিচরন শুরু হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তাই আমরা চাই হাইটেক পার্ক অন্যত্র স্থানান্ত করা হোক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্লান অক্ষুণ্ণ রেখে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাইডে হাইটেক পার্কটি নির্মাণ করা হোক।
শুধুমাত্র শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই নন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রস্থলে হাইটেক পার্ক নির্মাণের বিপক্ষে কর্মকর্তারাও। কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি তুহিন মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রস্থলে হাইটেক পার্ক নির্মাণ হলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দ্বিতীয় একাডেমিক ভবন নির্মাণ বাঁধাগ্রস্ত হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার প্লান নষ্ট হবে অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্যতা হুমকির সম্মুখীন হবে। তাই দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনের স্থানে হাইটেক পার্ক আমরাও চাই না এবং আমরা মনে করি হাইটেক পার্কটি প্রয়োজনে নতুন জায়গা অধিগ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সাইডে নির্মাণ করা হোক।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হাইটেক পার্ককে চার একরের যে জমি প্রদান করছে এই সমমানের সমপরিমাণ জমি পুনরায় তাদের অধিগ্রহণ করতে প্রয়োজন হবে প্রায় ৮ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ ভূমি রেজিস্ট্রার অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে গোবরা মৌজায় প্রতি শতাংশ নাল জমির মূল্য ৭২ হাজার ৭১০ টাকা, সেই হিসেবে চার একর জমির মূল্য প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন, ২০১৭ অনুযায়ী কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান জমি অধিগ্রহণ করলে জমির মালিককে বাজারদরের ওপর অতিরিক্ত ২০০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। অর্থাৎ বশেমুরবিপ্রবির পুনরায় সমমানের চার একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য অতিরিক্ত ৫ কোটি ৮১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকাসহ ব্যয় হবে প্রায় ৮ কোটি ৬২ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার উপাচার্য ড. একিউএম মাহবুবের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে ইতোপূর্বে হাইটেক পার্ক সম্পর্কিত একটি বক্তব্য তিনি বলেন, তোমাদের সমস্যা কি? একটা ভালো জিনিস হচ্ছে আর তোমরা শুধু নেগেটিভ কথা বলছো। এটা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আশীর্বাদ। এটি প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন। অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন দেয়া হচ্ছে না। আমাকে মন্ত্রণালয় থেকে ফোন দেয়া হয়েছিলো।