গতকালই নতুন জুতা কেনার টাকা চেয়েছিল বুলবুল: মা
আট মাসে আগে স্বামীকে স্বামীকে হারিয়েছেন ইয়াসমিন বেগম। সেই শোক কাটিয়ে না উঠতে খবর এলো ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেছে ছোট ছেলেটার। নাড়ি ছেঁড়া ধনকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বুলবুলের মা। কোনোভাবেই তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না পরিবারের সদস্যরা।
গতকালই মায়ের কাছে নতুন জুতা কেনার টাকা চেয়েছিল বুলবুল। ছেলের সেই শখ পূরণ করতে পারেনি মা। ছেলেকে জুতা কিনে দিতে না পেরে বারবার আফসোস করে এই প্রলাপ বকছেন তিনি। হয়তো আজীবন এই আফসোস বয়ে বেড়াবেন তিনি।
বুলবুল নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াহাব মিয়ার ছেলে। তার বড় ভাই একটি বেসরকারি চাকরি করতো। ভাই এবং তার টিউশনির টাকায় চলতো সংসার।
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবি ছাত্র হত্যার সময় উপস্থিত প্রেমিকার রহস্যজনক আচরণ
তার বড় বোন সোহাগী বলেন, ‘বুলবুল তাকে বলত, আপা চিন্তা করবি না। একদিন আমি অনেক বড় হব। পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘তার স্বপ্ন ছিল বুলবুল বিসিএস ক্যাডার হবে। নিম্নবিত্ত এই সংসারের হাল ধরবে। সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
বুলবুলের বড় চাচা শহিদুল্লাহ মিয়া বলেন, ‘গত বছরের ডিসেম্বরে স্ট্রোক করে মারা যান বুলবুলের বাবা আব্দুল ওহাব। তার মৃত্যুর পর অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে চলছিল পরিবারটি। চার ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট বুলবুলের ইচ্ছা ছিল মায়ের কষ্ট ঘোচাবে। বিসিএস দিয়ে বড় কর্মকর্তা হবে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।’
পড়ালেখায় অনেক মেধাবী ছিলো বুলবুল। ২০১৬ সালে নরসিংদী সদরের কালিকুমার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৮ সালে আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন। একই বছর ডিসেম্বরে ভর্তি হন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগে।
প্রসঙ্গত, সোমবার সন্ধ্যায় শাবিপ্রবির বেগম সিরাজুন্নেছা হল সংলগ্ন গাজীকালুর টিলায় অজ্ঞাত দুষ্কৃতিকারীদের হাতে শিক্ষার্থী বুলবুল ছুরিকাহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার ও পরে উন্নত চিকিৎসার ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।