শাবিপ্রবি ছাত্র হত্যার বিচার দাবিতে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ

মহাসড়ক অবরোধ
মহাসড়ক অবরোধ   © সংগৃহীত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) ছুরিকাঘাতে নিহত ছাত্র মো. বুলবুল আহমেদ (২২) হত্যার বিচার এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে সোয়া এক ঘণ্টা বিক্ষোভের পর সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন একদল শিক্ষার্থী। তবে পৌনে এক ঘণ্টা পর সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অনুরোধে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে আসেন।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে গাজী-কালু টিলা লাগোয়া ‘নিউজিল্যান্ড’ এলাকায় বুলবুল ছুরিকাহত হন। পরে তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত পৌনে আটটার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত বুলবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি নরসিংদী জেলার সদর উপজেলার চিনিশপুরম নন্দীপাড়া গ্রামে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের ২১৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন। বুলবুলের সহপাঠীদের ধারণা, বিকেলের দিকে টিলায় হাঁটতে গিয়েছিলেন বুলবুল। তখন ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে তিনি ছুরিকাহত হন।

বুলবুলের মৃত্যুর খবর পেয়ে একদল সাধারণ শিক্ষার্থী রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমরা ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমাদের দাবি, নিরাপদ শাবিপ্রবি’ বলে স্লোগান দেন। ঘণ্টাখানেক প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা পুনরায় গোলচত্বরে এসে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন।

পরে গতকাল রাত পৌনে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা কয়েকটি টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে প্রতিবাদ জানায়। তখন সড়কের দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ নিহত বুলবুলের পরিবারের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগিয়ে আসবে বলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দেন। এ সময় গাজী-কালু টিলা এলাকায় নিরাপত্তা বৃদ্ধির পাশাপাশি সন্ধ্যার পর থেকে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা এবং সার্বক্ষণিক সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারেও উপাচার্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দ্রুত খুনীদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অবরোধ থেকে সরে আসেন। এরপর যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়।

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পরে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। উপাচার্য এ সময় বলেন, বুলবুল হত্যার ঘটনায় আমরা দ্রুত বিচার চাই। ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে আমরা কথা বলেছি। যারা তাঁকে হত্যা করেছে, তাদের অতিদ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে যা যা করা দরকার, সব করছি। সীমানা প্রাচীর দেওয়ার পরেও ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আনাগোনা চলছে। এটি রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপাচার্যের পর সিলেট মহানগরের উপপুলিশ কমিশনার মো. আজবাহার আলী শেখ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, বুলবুল হত্যার ঘটনায় দোষীদের যত দ্রুত সম্ভব আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সেটা আজ হোক বা কালকের মধ্যেই হোক। এ ঘটনার বিচার যেন খুব দ্রুত হয়, আমরা সে চেষ্টা করব।

এদিকে বুলবুল হত্যার ঘটনায় গতকাল রাতেই সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা (মামলা নম্বর-২৮) দায়ের করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, বন্ধুদের নিয়ে টিলায় বেড়াতে গিয়ে দুষ্কৃতিকারীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে বুলবুল নিহত হন। বুকের বাম পাশে ছুরিকাঘাতে প্রচুর রক্তক্ষরণে বুলবুল মারা যান বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ