পদোন্নতি না দিতে ভিসিকে নালিশ, তর্কাতর্কিতে জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে শিক্ষক

হাসপাতালে ভর্তি
হাসপাতালে ভর্তি  © সংগৃহীত

শিক্ষককে পদোন্নতি না দিতে বিভাগ থেকে নালিশ যায় ভিসির কাছে। এ নিয়ে বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষে তার উপস্থিতিতে কথা কাটাকাটি হয় দুই শিক্ষককের। এক পর্যায়ে তা গড়ায় তর্কাতর্কিকে। এসময় অজ্ঞান হয়ে যান একজন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

আজ রোববার (২৬ জুন) দুপুরের গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগের সভাপতির অফিস রুমে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জন উঠে ‘দুই শিক্ষকের মারামারিতে হাসপাতালে ভর্তি এক’। এ নিয়ে সমালোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অভিযুক্ত শিক্ষক ও ফার্মেসী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল বাশার রিপন খলিফা বলেন, হাতাহাতি বা মারামারি এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। যারা এ ধরণের কথা ছড়াচ্ছেন তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব করছেন। আমি নিজে উনাকে (ভুক্তভোগী) হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছি; হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। আমি ডাক্তার ম্যানেজ করে দিয়ে এসেছি। উনি আগে থেকেই অসুস্থ।

তিনি বলেন, আগামী মঙ্গলবার আমাদের ফার্মেসী বিভাগের বোর্ড (পদোন্নতি) হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা স্থগিত করা হয়। আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম আমার নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে অভিযোগ করেছেন। এজন্য বোর্ড স্থগিত করা হয়েছে।

“আজ চেয়ারম্যানের কক্ষে এ অভিযোগ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উনি উত্তেজিত হয়ে কথা বলা শুরু করেন। পরে আমিও উত্তেজিত হয়ে কথা বলি। উত্তেজনার মধ্যে আমি রুম থেকে বাইরে চলে গেলে তিনি (ভুক্তভোগী শিক্ষক) সেন্সলেস হয়ে পড়ে যান।”

ভিসির কাছে ফার্মেসী বিভাগের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম এ ধরণের অভিযোগ করেছেন কিনা, তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

তবে বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো.কামরুজ্জামান বলেন, বিভাগের পদোন্নতি নিয়ে দুই শিক্ষকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল।

“যাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তিনি আগে থেকেই মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। পরে ওই শিক্ষকের (অভিযুক্ত) সঙ্গে তার কথাকাটি হলে তিনি সেখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। পরে তারা সবাই মিলে তাকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে নিজ বাসায় রয়েছেন। এখন তার শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে।”

যা বললেন ভুক্তেভোগী শিক্ষক
ফার্মেসী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী খান। তিনি সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি প্রত্যাশী। তিনি জানান, আজকে আমার শরীরটা খারাপ থাকায় সকালে একটু দেরিতে ঘুম থেকে উঠি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিভাগীয় সভাপতি (চেয়ারম্যান) ফোন দিয়ে অফিসে যেতে বললে যাই।

“বিভাগীয় সভাপতির কক্ষে যাওয়া হলে কিছুক্ষণ পর সেখানে আমাদের অন্য একজন সহকর্মীকে (আবুল বাশার রিপন খলিফা) আসেন। এরপর তিনি সভাপতিকে বলেন যে, আমার প্রমোশন নিয়ে আপনারা অভিযোগ দিয়েছেন। কারা অভিযোগ দিয়েছেন?কেন অভিযোগ দিয়েছেন? এ বিষয়ে ভিসি স্যার আমাকে বলেছেন যে আমার নামে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।”

ড. মোহাম্মদ আলী খান বলেন, তখন সভাপতি আবুল বাশারকে বলেন আমি তো আপনার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি। তখন রিপন খলিফা বলেন যে, তাহলে ভিসি স্যার মিথ্যা কথা বলছেন, না হয় আপনি (চেয়ারম্যান) মিথ্যা কথা বলছেন। যেহেতু ভিসি স্যার আমাকে বলছে একথা যে, আপনি অভিযোগ দিয়েছেন তার মানে আপনি মিথ্যা বলছেন। 

তিনি আরও বলেন, তারপর আমার এই বিষয় নিয়ে সভাপতি স্যার বলেন, আপনার বিরুদ্ধেও ভিসির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে যে আপনার কাগজপত্র ঠিক নেই আপনাকে যেন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর (সহযোগী অধ্যাপক) পদে প্রমোশন না দেওয়া হয়। 

“তখন আমি জিজ্ঞেস করি কি কাগজপত্র ঠিক নেই? আমরা যখন পিএইচডি সম্পন্ন করি তখন আমাদের সুপার ভাইজার একটি প্রত্যয়নপত্র দেন যে, তিনি তার থিসিস জমা দিয়েছেন এবং কিছু দিনের মধ্যেই তার ডিগ্রি প্রদান করা হবে। এবং সেখান থেকে জানানো হয় কিছু দিনের মধ্যেই আমার সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।” 

ড. মোহাম্মদ আলী খান বলেন, তখন এসব কথা শুনে মনে হচ্ছিলো রিপন খলিফা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লানিং কমিটিকে জানিয়েছে আমার কাগজপত্র  যেনো গ্রহণ করা না হয়। এরকম কথা চলতে চলতে রিপন খলিফা একপর্যায়ে আমাদের উপর চড়াও হয়ে যায়। এরপর রিপন খলিফা অনেক রাগারাগি করেন এবং তারপর তিনি সেখান থেকে চলে যান৷ এর কিছুক্ষণ পরে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এরপর আমি এখন হাসপাতালে ভর্তি। জ্ঞান ফেরার পর জানতে পারি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলাম।


সর্বশেষ সংবাদ