প্রশংসা কুড়িয়েছেন ৪ ভিসিসহ বুয়েটের ৬ অধ্যাপক
পদ্মা সেতুকে ঘিরে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ অপরিসীম। এই সেতুর উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ অঞ্চল থেকে শুরু করে সারাদেশের মানুষের খুশির জোয়ার বইছে। আর এখন থেকে বাড়ি ফেরার আনন্দটা অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা হবে দক্ষিণ এলাকার মানুষগুলোর।
পদ্মা সেতু তৈরি ছিলো দেশের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ এবং সবচেয়ে বড় সার্থকতা। মূলত এ প্যানেল সেতুর নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, নকশা পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের বিশেষজ্ঞ পরামর্শ প্রদান করে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এ সেতু প্রকল্পে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে প্যানেল তৈরি করা হয়। জাতীয় অধ্যাপক ও বুয়েটের সাবেক শিক্ষক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে ১১ সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সভাপতি নিযুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে তিনি মারা গেলে এই দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আরেক অধ্যাপক ড. এম. শামীম জেড. বসুনিয়াকে।
সভাপতিসহ ১১ সদস্যের মধ্যে ৬ জনই ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক। তাদের মধ্যে ৪ জন বুয়েটসহ দুটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদিকে, সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মরণ করছিলেন এসব প্রকৌশলী বিশেষজ্ঞদের অবদানের কথা। প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন, জামিলুর রেজা চৌধুরী দেখে যেতে পারলেন না! আমরা তাঁকে হারিয়েছি।
জানা যায়, আমেরিকার এইসিওম পদ্মা সেতুর নকশা করেছে। স্ট্রাকচার ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এইসিওমের পরিচালক ড. রবিন স্যামের লেখা থেকে সেতুর নকশার চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। চায়না মেজর ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি নির্মাণকাজ করেছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই কাজের সঙ্গে নানাভাবে যুক্ত। এর বাইরেও অনেক প্রতিষ্ঠান, মানুষ, দেশ এই সেতুর সঙ্গে যুক্ত। পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ২১ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার ৭৩২ কোটি ৮ লাখ টাকা।
১১ সদস্যের মধ্যে ৬ জনই ছিলেন বুয়েটের অধ্যাপক
অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী: তিনি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন এই অধ্যাপক পদ্মা সেতু প্যানেলেরও সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ভিসির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. এম. শামীম জেড. বসুনিয়া: বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন এই অধ্যাপক ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকেও অধ্যাপকের দায়িত্ব পালন করেন। পদ্মা সেতু প্যানেলের চেয়ারম্যান তিনি।
অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত: পদ্মা সেতুর প্যানেল সদস্য (নদী প্রকৌশল)। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন এই অধ্যাপক এক সময় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরও দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক ড. এ. এম. এম. শফিউল্লাহ: বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন এই অধ্যাপক বিশ্ববিদ্যালয়টির দশম উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি পদ্মা সেতুর জিওটেকনিক্যাল অ্যান্ড ফাউন্ডেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্যানেল সদস্য।
অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ: তিনি পদ্মা সেতুর প্যানেল সদস্য (এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং)। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন এই অধ্যাপক স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির দায়িত্ব পালন করেন।
অধ্যাপক ড. আলমগীর মজিবুল হক: তিনি পদ্মা সেতুর প্যানেল সদস্য (পরিবহন প্রকৌশল)। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ছিলেন তিনি।
দেশী-বিদেশি আরও ৫ সদস্য যারা-
মি. ক্লাউস হেনরিক ওস্টেনফিল্ড: তিনি পদ্মা সেতুর প্যানেল সদস্য (স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং)। তিনি ডেনমার্কের কারিগরি বিজ্ঞান অনুষদ আরহাস ইউনিভার্সিটির অ্যাডজাংক্ট প্রফেসর। নতুন প্রযুক্তিসহ দীর্ঘ স্প্যান সেতুর ডিজাইন ডেভেলপমেন্টের বিশেষজ্ঞ পরামর্শদাতা।
প্রফেসর ড. কেনজি ইশিহার: তিনি পদ্মা সেতুর প্যানেল সদস্য (জিওটেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং)। তিনি জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (সিভিল ইঞ্জি.)।
প্রফেসর ড. ইয়োজো ফুজিনো: তিনি পদ্মা সেতুর প্যানেল সদস্য (ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং)। তিনিও জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (সিভিল ইঞ্জি.)।
মি. ফরচুনাতো কারভাজাল মোনার: তিনি পদ্মা সেতুর প্যানেল সদস্য (নদী প্রকৌশল)। কলম্বিয়ার সিনিয়র কোস্টাল অ্যান্ড রিভার ইঞ্জিনিয়ার ও যমুনা বহুমুখী সেতু নদী শাসন নকশা প্রকল্প ছিলেন তিনি।
ড. মোহাম্মদ আউয়াল: তিনি পদ্মা সেতুর প্যানেল সদস্য (ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং)। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বে ব্রিজের স্ট্রাকচারাল ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত।