চার বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বে ৪ বুয়েট অধ্যাপক
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষকতার পর দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে অনেকে নিয়োগ পেয়েছেন। এমন অন্তত ৪ জন বুয়েট অধ্যাপক বর্তমানে দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্বে রয়েছেন। বুয়েটের ওয়েবসাইটে ‘টিচার্চ সার্ভিং এট ন্যাশনাললি ইম্পর্টেন পজিশন্স’ ক্যাটাগরিতে তাদের নাম-পরিচয় উঠে এসেছে। বুয়েট থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদের দায়িত্ব শেষে অনেকে অবসরেও চলে গেছেন।
বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন এমন ৪ জন হলেন— ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান, লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী আজিজুল মাওলা, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই তালিকার বাইরেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বুয়েটের আরও কয়েকজন অধ্যাপক উপাচার্য হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তারা প্রত্যেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর মধ্যে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া তিনি বুয়েটের উপ-উপাচার্যেরও দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে তিনি বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ১৯৮২ সালে স্নাতক (ইঞ্জি.) ও ১৯৮৪ সালে পরিবেশ প্রকৌশল বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
আরও পড়ুন: ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮টিতেই নেই ভিসি-ট্রেজারার
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে আলাপকালে অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, করোনা মহামারির মধ্যেই ২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম গতিশীল করতে সব ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি। এখন একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজও সমানভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, বুয়েটসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের সুযোগ হয়েছে। এ অভিজ্ঞতাগুলো ডুয়েটে সমানভাবে প্রয়োগ করতে পেরেছি। ডুয়েটকে এগিয়ে নিতে এ অভিজ্ঞতা আমাকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে। বুয়েটের উপ-উপাচার্যের অভিজ্ঞতা ডুয়েটে আমাকে সবচেয়ে বেশি কাজে দিয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমার আরও বৃহত্তর পরিসরে কাজের সুযোগ রয়েছে। সরকার আমাকে সে সুযোগ করে দিয়েছে।
অধ্যাপক ড. কাজী আজিজুল মাওলা ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি অধ্যাপক ও ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরে ২০০১ সালে তিনি বুয়েটের অধ্যাপক হন। এছাড়া তিনি বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার সিঁড়ি ঢাবি শিক্ষক সমিতি
অধ্যাপক কাজী আজিজুল মাওলা বলেন, কর্মজীবনে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারি অধ্যাপক ও ১৯৯৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছি। পরে ২০০১ সালে বুয়েটের অধ্যাপক হই। এছাড়াও জাপানের ফুকুয়াকার কিউসো বিশ্ববিদ্যালয় ও বেলজিয়ামের ক্যাথোলিক ইউনিভার্সিটি লিওভেনে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
তিনি বলেন, এরপর মনে হয়েছে বৃহত্তর পরিসরে আরও কিছু করার সুযোগ রয়েছে। সেই চিন্তা থেকে লিডিং ইউনিভার্সিটিতে যুক্ত হওয়া। করোনার মধ্যেই এখানে দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্বগ্রহণের পর থেকে বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। করোনার মধ্যে প্রথমে অনলাইন ক্লাস শুরু করি। ধাপে ধাপে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করতে যা যা দরকার সবগুলো করার চেষ্টা করছি।
অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম ১৯৯৪ সালে বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে ২০০৯ সালে অধ্যাপক পদমর্যাদায় উত্তীর্ণ হন। এছাড়া তিনি বুয়েটের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের পরিচালক, এস্টাব্লিশমেন্ট অব শিফ মডেল টেস্টিং সেন্টারের প্রকল্প পরিচালক, ও দুটি হলের প্রভোষ্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর এ গ্রাজুয়েশন শেষ করে পরের বছর প্রথম কোয়ার্টারেই লেকচারার হিসেবে নিজের ডিপার্টমেন্টে যোগদান করি। ১৯৯৭ সালে একই ডিপার্টমেন্ট থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন করি। পাশাপাশি শিক্ষকতা চলতে থাকে। এরপর ২০০১ এ উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য জাপানে যাই। ইয়োকোহামা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করি। ফিরে এসে আবার যোগদান করি বুয়েটে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে পূর্ণ অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পাই। এরপর বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের পদে দায়িত্ব পালনসহ বিদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছি।
তিনি বলেন, নিয়মিত অধ্যাপনার পাশাপাশি আমি বুয়েটের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটির সিন্ডিকেট সদস্য, খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের পরিচালকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরে আসীন রয়েছি। সবশেষ ২০২০ সালে ওআইসি পরিচালিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, আইইউটিতে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি।
আইইউটি নিয়ে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান প্রশাসনের নেতৃত্বে আইইউটি বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিতে শুরু করেছে। আমরা প্রতিবছর দেশি-বিদেশী মোট ২২২ জন শিক্ষার্থীকে স্কলারশিপ দিয়ে থাকি। এরমধ্যে ১৪০ জন বিদেশী ও ৮২ জন দেশি শিক্ষার্থী থাকেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার মানোন্নয়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি; রেজাল্টও পাচ্ছি আমরা। ইতিমধ্যে কিউ এস এশিয়া র্যাংকিংয়ে আইইউটি জায়গা করে নিয়েছে। আমার বিশ্বাস, সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে আইইউটি শিক্ষা ও গবেষণায় উত্তোরত্তর উন্নতি করতে পারবে।
অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) পরিচালিত গাজীপুরের ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এর আগে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্যের দায়িত্বেও ছিলেন।
আরও পড়ুন: এক ঘরে দুই ভিসি, স্বামী বেসরকারি-স্ত্রী সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের
অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ বলেন, বিদেশ থেকে উচ্চতর গবেষণার ডিগ্রি নেওয়ার পর বেশিরভাগই আর দেশে ফেরেন না। কিন্তু আমি তেমনটি করিনি। শিক্ষা জীবন শেষে প্রথমে বুয়েটে যোগদান করি। এরপর বুয়েটে সফলভাবে অধ্যাপনা শেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য পদে যোগদান করি। যোগদানের পরেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটিলতা নিরসন, ডিজিটালাইজেশন ও পরীক্ষায় গতিশীলতা আনায়নসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি।
তিনি বলেন, এরপর ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়ে প্রথম নারী শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমার নেয়া উদ্যোগের আগে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নারী কোন নারী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীও ছিল না। আমাদের নেয়া এ উদ্যোগের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়টি থেকে পড়াশোনা শেষ করে বর্তমানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নারী শিক্ষার্থীরা অবদান রাখছে। এছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে বিশ্ববিদ্যালয়টির আধুনিকায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি।
বিডিইউ নিয়ে মুনাজ আহমেদ বলেন, সবশেষ বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়া ছিল আমার জন্য সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। সম্পূর্ণ নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় বলতে গেলে নিজ হাতে গড়ে তুলেছি। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এমন কিছু প্রযুক্তি আমরা যুক্ত করেছি, যেগুলো উপমহাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়েও নেই। আমার সব কর্মের কৃতিত্ব বুয়েটে। শিক্ষার বৃহত্তরে পরিসরে কাজের সুযোগের উদ্দেশ্যে বুয়েট থেকে বের হওয়া। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।
এ চারজন ছাড়াও বুয়েটের ওয়েবসাইটে ‘টিচার্চ সার্ভিং এট ন্যাশনাললি ইম্পর্টেন পজিশন্স’ ক্যাটাগরিতে প্রকাশিত তালিকায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের (সিইউবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলামের নামও উঠে এসেছে। তবে সিইউবিতে তার উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ট্রাস্টি বোর্ডের সিনিয়র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এইচ এম জহিরুল হক।