হল প্রভোস্টকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদে বশেমুরবিপ্রবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়াকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হল চত্ত্বরের সামনে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা হল প্রভোস্ট মো. ফায়েকুজ্জামান মিয়ার সাথে অশোভন আচরণের নিন্দা ও জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান।
মানববন্ধনে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সেলিম রেজা বলেন ‘শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট স্যারকে আমরা একজন শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক হিসেবে দেখে আসছি। একটি গুজব ছড়ানো হয়েছে যে তিনি তার বিভাগের ৪০-৪৫ জন শিক্ষার্থীকে হলে সিট দিয়েছেন। কিন্তু সত্যি হলো সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে কৃষি বিভাগের এবং মাত্র ১৮ জন রয়েছে একাউন্টটিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের। সুতরাং এই তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমরা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা স্যারের সমস্ত কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট।’
মানববন্ধনে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী কারিমুল হক বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন থেকে শেখ রাসেল হলে আছি। যেকোনো জাতীয় অনুষ্ঠানসহ ছাত্রলীগের প্রোগ্রামসমূহ শেখ রাসেল হল সবচেয়ে সুন্দরভাবে আয়োজন করে আর এসকল আয়োজনে সর্বোচ্চ সহযোগিতাপরায়ণ থাকেন ফায়েকুজ্জামান স্যার৷’
আরও পড়ুন: কিউএস র্যাংকিংয়ে বড় অগ্রগতি বুয়েটের
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসান মাহমুদ বলেন, ‘শেখ রাসেল হল খুব সুষ্ঠুভাবেই চলতেছিল কিন্তু ঐদিন রাতে জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষার্থী বহিরাগতদের নিয়ে শেখ রাসেল হলে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাই। তারা বিজয় দিবস হলের রিডিং রুম ভাঙচুর ও হল চত্ত্বরের গ্লাস ভাঙচুর করেছে৷ হলের কোন সমস্যা হলে সেটা হল প্রশাসন দেখবেন। একজন সাবেক শিক্ষার্থীর কিভাবে সাহস হয় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হলে প্রবেশের৷ আমরা এসব অপকর্মের বিচার চাই।’
মানববন্ধন শেষে হল প্রভোস্ট ফায়েকুজ্জামান মিয়াকে জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে প্রক্টর বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন শেখ রাসেল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।
স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, সিট দখলকে কেন্দ্র করে জাহাঙ্গীর আলম তার দলবল সহ হলে এসে প্রভোস্ট ফায়েকুজ্জামান স্যারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। রাত ১১ টার দিকে সে তার গ্যাং নিয়ে দেশীয় অস্ত্র, রড নিয়ে হলে মহড়া দেয় এবং হলের শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে তারা আক্রমণ করে এবং হল চত্ত্বর, বিজয় দিবস হলের রিডিং রুম সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ নষ্ট করে৷
আরও পড়ুন: বশেমুরবিপ্রবিতে গভীর রাতে সংঘর্ষ
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা সাবেক ছাত্র জাহাঙ্গীর আলমের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শেখ রাসেল হলে দীর্ঘদিন ধরেই সিটকে কেন্দ্র করে ঝামেলা চলছিলো। হলটিতে একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রায় ৪৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। একটি হলে এক বিভাগের এতজন শিক্ষার্থী কীভাবে থাকে সেটি প্রশ্ন রাখার মত বিষয়। আমরা মূলত সমস্যার সমাধানের জন্যই গিয়েছিলাম এবং কোনোরূপ জটিলতা তৈরির উদ্দেশ্য ছিলো না। কিন্তু স্যার আমাদের দেখে কিছুটা উত্তেজিত হলে এক পর্যায়ে কথা কাটাকাটি হয়। বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হতে পারতো কিন্তু একাউন্টিংয়ের শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ঝামেলাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়।’
তবে এআইএস বিভাগের ৪৬ জন শিক্ষার্থীকে শেখ রাসেল হলে এলোট দেয়া হয়নি জানিয়ে হল প্রভোস্ট ফায়েকুজ্জামান মিয়া বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। নিয়মানুযায়ী হলে সিট বন্টন করা হয়েছে।অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে বিতর্কিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে এমন ভিত্তিহীন তথ্য শেয়ার করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার শেখ রাসেল হলের সিট বরাদ্দ নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর গ্রুপ কর্তৃক হল প্রভোস্টের সাথে অশোভন আচরণের ঘটনা ঘটে এবং পরবর্তীতে বিজয় দিবস হলে ভাঙচুরের ফলে মধ্যরাতে জাহাঙ্গীর গ্রুপের সাথে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।