২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮:৩৪

স্থানীয়দের কাছে অনিরাপদ শিক্ষার্থীরা, উল্টো অভিযোগ ‘শিক্ষার্থীরা উচ্ছৃঙ্খল’

ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে  © ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। ছাত্রী ধর্ষণের মত ঘটনা বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সম্পর্কের দীর্ঘদিনের অঘোষিত অসন্তোষের ফল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্থানীয়দের কাছে তারা অনিরাপদ। তারা শিক্ষার্থীদের ভালো দৃষ্টিতে দেখেন না। তবে স্থানীয় এলাকাবাসী বলছে, শিক্ষার্থীরা অস্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করেন। তাদের এ ধরনের আচরণ তারা নিতে পারেন না। এসব নিয়ে উভয়পক্ষে অসন্তোষ চরমে পৌঁছেছে।

এদিকে, সর্বশেষ গত বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়টির এক ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ক্যাম্পাসসহ পুরো এলাকাজুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চতুর্থ দিনেও মতো ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী স্থানীয়দের বিচার দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন তারা।

আরও পড়ুন: বন্ধ হচ্ছে না বশেমুরবিপ্রবি, হামলার ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে

তারা বলছেন, আমাদের এক সহপাঠী বুধবার রাতে বাসায় ফেরার সময় গণধর্ষনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে আমরা আন্দোনল করছি। ইতোমধ্যে র‌্যাব ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তাদের ৬ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে। তাদের উপযুক্ত বিচার হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

সাইফুল ইসলাম নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থী জানান, তাদের সহপাঠীর ধর্ষণের স্বীকার হয়েছেন এ খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে তারা বিচার দাবিতে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছেন। সেখানে স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের উপর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে। সাইফুলের ভাষ্য, ‘বিচারপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করে তারা ধর্ষকদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন’।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা বলছেন, তারাও ধর্ষকদের বিচার চান। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ধর্ষণের শিকার হওয়ার মত ঘটনা তাদের (ছাত্র-ছাত্রী) কারণেই হয়েছে। তাদের চলাফেরা ও আচার-আচরণ অস্বাভাবিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্যাম্পাসের পাশ্ববর্তী এলাকায় যেভাবে চলাফেরা করেন সেটা কোন সভ্য সমাজে হতে পারে না।

গোপালগঞ্জের সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বশেমুবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ডের সাবেক সদস্য অধ্যাপক এমএ হাই বলেন, ‘‘বিকাল হলেই শিক্ষার্থীরা শিশুপার্কসহ ক্যাম্পাসের আশেপাশের আড্ডার স্থানগুলোতে অবাধ মেলামেশা করে থাকে। এ স্থানগুলো এখন যে ঘটনাগুলো ঘটছে এটা আগে কখনো ছিল না। অবাধ মেলামেশার কারণে পরিস্থিতি অন্যরকম হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের এ অবাধ বিচরণের সুযোগটা আসলে স্থানীয় বখাটেরা নিচ্ছে।’’

স্থানীয় মেস ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বাসা ভাড়া দিয়ে চলছি। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। আমরাও চাই তারা নিরাপদে পড়ালেখা করুক। কিন্তু কিছু কিছু ছাত্র-ছাত্রীদের চলাফেরা আমাদেরও পছন্দ হয় না।

উচ্চশিক্ষা নিতে আশা শিক্ষার্থীদের জীবনে স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু এলাকবাসী তাদের এ স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে অভিযোগ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানান, স্থানীয় এক শ্রেণীর বখাটেরা প্রায় সময় তাদের উত্ত্যক্ত করেন। এরা ছাত্রীদের দেখলেই তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ এবং জন্ম-পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

অধ্যাপক এমএ হাই বলেন, আমরা শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের রাত ১০টার সময় হেলিপ্যাড এলাকায় আপত্তিকর অবস্থায় পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা থাকতে পারে। তবে স্বাধীনতার নাম করে অবাধ বিচরণ ঠিক নয়। তাদের এমন অবাধ্য চলাফেরা দেখে বখাটেরাও সুযোগ নিতে চাইছে। এরূপ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে কিছু আইনকানুন করা প্রয়োজন।

অবশ্য স্থানীয় কমিশনার আল আমিন ইসলাম স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের অবনতির বিষয়টিকে ঢালাওভাবে দেখতে রাজি নন। তিনি বলেন, আমার নিজের বাসায়ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে আমার আরও আত্মীয়-স্বজনদের বাসা মিলে কমপক্ষে ২০০-৩০০ শিক্ষার্থী থাকেন। তাদের সঙ্গে আমাদের ভালোই সম্পর্ক। তবে যেসব অভিযোগগুলো করা হচ্ছে, সেগুলো অস্বভাবিক কিছু নয়। ভালো-খারাপ নিয়েই সমাজ। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা কাছ করছি।

আরও পড়ুন: ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে বশেমুরবিপ্রবিতে মানববন্ধন

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় এলাকাবাসীর সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের আলোচনা হয়েছে। সেসময় থেকে উভয়ের সম্পর্কের উন্নতি হলেও সাম্প্রতিক সময়ে সেটিতে ফের ভাটা পড়েছে। তবে এবিষয়ে শিক্ষার্থীদের থেকে বলা হচ্ছে, তারা আর এ ধরনের আলোচনার সমাধানে বিশ্বাসী নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবকাঠামগত উন্নয়নে মত তাদের।

নবীনবাগ এলাকায় মেসে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়টি এক শিক্ষার্থী বলেন, নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেই ভাবতে হবে। অতিদ্রুত হল ফ্যাসিলিটি বাড়াতে হবে। এটা অবশ্য বললেই সম্ভব নয়। তবে কাজ অতিদ্রুত শুরু করতে হবে। এর মাঝে চাইলে গোবরা ইউনিয়নের বাসাগুলো চুক্তিভিত্তিক ভাড়া নেয়া যেতে পারে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মেস নিয়ে থাকার সমস্যা ফেস করতে হবে না।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব রবিবার বিকেলে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ক্যাম্পাসে বর্তমানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হচ্ছে। তারা আন্দোলন থেকে সরে আসছেন। ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা গ্রেপ্তার হয়েছে। এছাড়া বিচারপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের উপর যে হামলা হয়েছে সে ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ধর্ষনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেটির উন্নয়নে কাজ চলমান থাকবে।