২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৮:৫০

ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বশেমুরবিপ্রবির সেই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন তারা

  © সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ছাত্রীকে ধর্ষণের আগে প্রথমে ইভটিজিং করা হয়। এর প্রতিবাদ করায় তাকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। জড়িতরা পেশাদার অপরাধী। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নানা অপরাধে জড়িত থাকায় একাধিক মামলা রয়েছে। তবে তাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন। আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানানো হয়।

চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত গোপালগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি গোপালগঞ্জের স্থানীয় একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ন্যক্কারজনকভাবে গণধর্ষণের শিকার হন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ভুক্তভোগীসহ দুই শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের নবীনবাগ হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে মেসে যাওয়ার সময় কিছু দুর্বৃত্ত নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে বাদানুবাদে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে ভিকটিমকে জোর করে স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করা হয়।

ধর্ষণের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে। সারাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের আন্দোলনে এক হয়ে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

এরই ধারাবাহিকতায়, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ এর অভিযানে শুক্রবার গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন রাকিব মিয়া ওরফে ইমন, পিয়াস ফকির, প্রদীপ বিশ্বাস, নাহিদ রায়হান, মো. হেলাল ও তূর্য মোহন্ত।

গ্রেপ্তাররা র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। র‌্যাব বলছে জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানিয়েছেন, তারা মূলত রাকিবের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি অপরাধ চক্রের সদস্য। তারা সবাই গোপালগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রেপ্তার তূর্য মোহন্ত ছাড়া তারা প্রায় ৮/১০ বছর যাবত নবীনবাগ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন, আড্ডা, জুয়াসহ বিভিন্ন ধরণের অপকর্মে লিপ্ত ছিল।

এছাড়াও তারা চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধেও জড়িত ছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্যক্ত করতো বলে জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রেপ্তাররা ইজিবাইক দিয়ে নবীনবাগ হেলিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় যাওয়ার পথে ভুক্তভোগীকে তার বন্ধুসহ দেখে ইজিবাইক থামিয়ে তাদেরকে নাম পরিচয় জিজ্ঞাসা করে এবং বিভিন্ন ধরনের অশালীন মন্তব্য ও ইভটিজিং করতে থাকে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাদের সঙ্গে ভিকটিম ও তার বন্ধুর বাকবিতণ্ডা হয়।

পরবর্তীতে তাদেরকে জোরপূর্বক ঘটনাস্থলের পাশে ঢালু জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলে ভুক্তভোগীর বন্ধু বাধা দেয়ায় গ্রেপ্তাররা তাকেও মারধর করে। গ্রেপ্তাররা ভিকটিমকে স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে গিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে।

গ্রেপ্তার রাকিব মিয়া ওরফে ইমন স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম সম্পন্ন করে। তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে রিসিপশনিস্ট হিসেবে চাকরি করে। তার বিরুদ্ধে মাদক ও মারামারির মামলা রয়েছে।

গ্রেপ্তার পিয়াস ফকির গোপালঞ্জের একটি পাওয়ার হাউজে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। প্রদীপ বিশ্বাস স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। তিনি গোপালগঞ্জে হোম সার্ভিসের মাধ্যমে এসি ও ফ্রিজ মেরামতের কাজ করেন।

গ্রেপ্তার নাহিদ রায়হান স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষে অধ্যয়নরত। হেলাল স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়ণরত। তিনি একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন।

গ্রেপ্তার তূর্য মোহন্ত খুলনার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে। পরবর্তীতে তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য বিদেশ গমন করে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ শেষ বর্ষে থাকাকালীন কোভিড পরিস্থিতির কারণে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং গোপালগঞ্জে সদরে গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। গ্রেপ্তার তূর্যের বিরুদ্ধে একটি মারামারির মামলা রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, এবারই প্রথম তারা ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে ভুক্তভোগী ও তার বন্ধু কেউই অপরাধীদের চিনত না। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করেছে। তবে র‌্যাব-৮ সফল হয়েছে। তারা নিয়মিত জুয়া খেলতো, আড্ডা দিতো গোপালগঞ্জ সদরের নবীনবাগ হেলিপ্যাড এলাকায়।

গ্রেপ্তার ছয়জনই যে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সে সম্পর্কে র‌্যাবের কাছে কী ধরনের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হবার পর গোয়েন্দা তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ওই ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সেটা বিজ্ঞ তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে উত্থাপন করবেন।

গ্রেপ্তারদের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা পাইনি। তবে তাদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনো অপরাধে মামলার আসামি। তারা অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখায়নি। তবে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে। মূলত পাশবিক প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই এ কাণ্ড ঘটিয়েছে।