সেই ‘সুবোধ’ আবার ফিরে এসেছে
রাস্তার ভাঙ্গাচোরা পলেস্তারা খসা দেওয়াল। পড়নে ছেড়া ফাটা প্যান্ট, উসকো খুসকো চুল। হাতে খাঁচায় বন্দী হলুদ কিংবা লাল সূর্য। আর এই সূর্য নিয়েই পালাচ্ছে একটি ছেলে। তার পাশে লেখা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না’, আর এই সুবোধকে নিয়ে দেশে কম আলোচনা হয়নি। তবে দীর্ঘদিন ধরে সুবোধ নিখোঁজ থাকার পর এবার প্রতিবাদী এ গ্রাফিতির দেখা মিলেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) এলাকাসংলগ্ন একটি বাসভবনের দেয়ালে।
নতুন আঁকা এ গ্রাফিতিতে দেখা যাচ্ছে, হাস্যোজ্জ্বল সুবোধ টেলিফোনে কথা বলছেন। টেলিফোন সংযোগের অপর প্রান্তে ইংরেজিতে লোগো আকারে লেখা ‘হবেকি?’।
শাবিপ্রবির পাশেই একটি বাসভবনের দেয়ালে আঁকা এ গ্রাফিতির অর্থ কী? এর একটা ব্যাখা দিয়েছেন সিলেট চারুশিল্পী সমন্বয় পরিষদের সদস্যসচিব ও নাট্যব্যক্তিত্ব শামসুল বাসিত শেরো। তিনি বলেন, গ্রাফিতি দেখে যা মনে হচ্ছে, এখানে হাস্যোজ্জ্বল সুবোধ হিসেবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বোঝানো হয়েছে। আর টেলিফোনের অপর প্রান্তে যেখানে ‘হবেকি?’ লেখা, সেটাকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের প্রতীকী হিসেবে দেখানো হয়েছে।
শামসুল বাসিত আরও বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা এখন তাঁদের দাবি–দাওয়া বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছেন। দাবি আদায়ের বিষয়ে তাঁদের মনে প্রশ্ন, ‘হবে কি?’। যে ‘ও’ অক্ষরটি লাল রং দিয়ে ভরাট করা, সেটি উদীয়মান সূর্যকে বোঝানো হয়েছে। উপাচার্যের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত সেই সূর্য উঠবে কি না, সেটি বোঝাতেই লাল বৃত্ত আঁকা হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই গ্রাফিতিগুলোই প্রমাণ করছে, আমাদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের মানুষদেরও সংহতি আছে।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে গত ১৬ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে নামেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ১৯ জানুয়ারি থেকে অনশন শুরু করেন তাদের কয়েকজন। ২৬ জানুয়ারি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ক্যাম্পাসে এসে দাবি পূরণে উদ্যোগ গ্রহণের আশ্বাস দিলে গত ১২ ফেব্রুয়ারি টানা ২৭ দিনের আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিলেও ওই ক্যাম্পাসে এখনও রয়ে গেছে আন্দোলনের রেশ। উপাচার্য আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিতেও দেখা যাচ্ছে।
এর মধ্যে শাবি ক্যাম্পাসের পাশে দেখা গেল এ দুটি গ্রাফিতি। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান সিলেটের আখালিয়া এলাকার। ওই এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের পাশের দেয়ালে একটি ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের পাশের দেয়ালে একটি গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে গ্রাফিতিগুলো চোখে পড়ছে বলে জানান স্থানীয়রা।
সুবোধের আদলের গ্রাফিতিটি আঁকা রয়েছে বিজিবি ক্যাম্পের পাশের দেয়ালে। এতে দেখা যায়, শ্মশ্রুমণ্ডিত ঝাঁকড়া চুলের একজন টেলিফোনে কথা বলছেন। টেলিফোনের তার যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে লেখা রয়েছে- HOBEKI?
অন্যদিকে মাউন্ড এডোরা হাসপাতালের পাশের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে দেখা যায়, একটি অন্ধকার ঘরে জানালা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে একটি হাত। সেই হাতে গোঁজা রয়েছে হলুদ একটি ফুল। এই জানালার ওপরেও লেখা রয়েছে- HOBEKI?
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যবিরোধী আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র শাহরিয়ার আবেদিন বলেন, ‘গ্রাফিতিগুলো আমাদের বিশ্বদ্যিালয়ের পাশেই আঁকা হয়েছে। তা ছাড়া গ্রাফিতির ধরন দেখেও বোঝা যায় এগুলো আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি ও সমর্থন জানিয়ে আঁকা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের পিটিয়েছে। তবু আমরা তাদের ফুল দিয়েছিলাম। একটি গ্রাফিতিতে এ রকম কিছু একটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আর সুবোধের ফোনে কথা বলার গ্রাফিতিটিতে আমাদের দাবি পূরণে উচ্চমহলের আশ্বাসের বিষয়টি বোঝানো হতে পারে।’
গ্রাফিতি হলো অনুমতি ছাড়াই জনসাধারণের অভিমতকে শৈল্পিকভাবে কোনো দেয়ালে লেখনী কিংবা অঙ্কনের মাধ্যমে তুলে ধরা। স্প্রে পেইন্ট বা মার্কার পেন সাধারণত গ্রাফিতি তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।