নিপুনের স্বপ্ন পূরণ, একটি আসন বাড়িয়ে যবিপ্রবিতে ভর্তির সিদ্ধান্ত
ব্যাপক সমালোচনার মুখে নিপুন বিশ্বাসকে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) কর্তৃপক্ষ। একটি আসন বাড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। আজ মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আব্দুর রশিদ জানান, যবিপ্রবি উপাচার্য মহোদয়ের নির্দেশে নিপুন বিশ্বাসের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। আগামীকালই ভর্তি হতে পারছেন তিনি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির আহ্বায়ক ড. মো. মেহেদী হাসান সই করা একটি নোটিশে বলা হয়, আজ বিকেল ৩টায় ডিনস কমিটির এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের ভর্তি সংক্রান্ত উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। সভায় সদস্যগণ স্বতঃস্ফূর্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
“গত ৩০ তারিখে ভর্তির জন্য বিজ্ঞপ্তির মেধাতালিকার একজন শিক্ষার্থী নিপুন বিশ্বাস, মেধাক্রম ১৭, ক্রমিক নম্বর ৭০২৬৯ পরিববহন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত সময়ে (সকাল ১০-১১টার মধ্যে) উপস্থিত হতে পারেননি। এমতাবস্থায়, অনুষদীয় ভর্তি কমিটি ওই শিক্ষার্থীর ক্রমের পরবর্তী ক্রমের (মেধাক্রম ১৯, রোল নম্বর ৭০০৩০) উপস্থিত শিক্ষার্থী জনাব বায়েজিদ মল্লিককে ভর্তি করেন। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থী (নিপুন বিশ্বাস) বেলা দেড়টায় উপস্থিত হন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবহিত করলে তিনি বিষয়টির মানবিক দিক বিবেচনায় শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে একটি আসন বর্ধিত করে ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর জন্য ডিনস কমিটিকে অনুরোধ করেন। উপাচার্যের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এ কমিটি ওই শিক্ষার্থীকে একটি আসন বাড়িয়ে ভর্তি করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির পরবর্তী সভায় অবহিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।”
জানা যায়, নিপুনের বাড়ি নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নে। তার বাবা প্রেমানন্দ বিশ্বাস পেশায় একজন নরসুন্দর। গত রবিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৫টায় যবিপ্রবির স্বাস্থ্যবিজ্ঞান অনুষদের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগে ২০২০-২১ সেশনে তৃতীয়বারের মতো ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টার মধ্যে উপস্থিত হতে না পারায় ভর্তি হতে পারেননি নিপুন বিশ্বাস। তিনি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান ততক্ষণে বেজে যায় ১২টা ৮ মিনিট। ১৫ হাজার টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া করে ক্যাম্পাসে এসেছিলেন তিনি।
ভুক্তভোগী নিপুন বলেন, তার কোনো স্মার্টফোন নেই, যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ঢুকে নোটিশটি দেখতে পারেননি। এমনকি তার মোবাইলে (সাধারণ ফোন) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো কল বা মেসেজও যায়নি। মাঝরাতে তার এক বড় ভাই ফোন করে বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি জানান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি আশপাশের লোকজন ও নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে ধার করে ২৩ হাজার টাকার ব্যবস্থা করেন।
এরপর নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর জন্য ১৫ হাজার টাকায় একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। কিন্তু যশোর থেকে নীলফামারীর দূরত্ব বেশি এবং রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে দুপুর ১২টা ৮ মিনিট বেজে যায়।
তিনি যখন গাড়িতে ছিলেন তখন এক বড় ভাইকে ফোন করে বলেন, তার ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে দেরি হবে। ক্যাম্পাসের ওই বড় ভাই বিষয়টি ডিনকে জানান। নিপুন যখন ক্যাম্পাসে পৌঁছান তখন জানতে পারেন মেরিট লিস্টে তিনি প্রথমে থাকলেও তৃতীয় সিরিয়ালে থাকা এক শিক্ষার্থীকে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। এরপর অনেক অনুনয়-বিনয় করেও ভর্তি হতে পারেননি নিপুন।