যবিপ্রবির লিফটে আটকে পড়ে কাঁদলেন সাবেক ভিসি
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাডেমিক ভবনের লিফট যেন মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম। এই লিফটে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের মুখে প্রায়ই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শোনা যায়। কিন্তু এবার সেই ত্রুটিপূর্ণ লিফটে আটকা পড়লেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ভিসি ও ডিনসহ একাধিক সিনিয়র শিক্ষক। লিফটে আটকাবস্থার এক পর্যায়ে ওই ভিসি অস্থির হয়ে পড়েন এবং কান্নাকাটি শুরু করেন।
গতকাল রবিবার (২৩ জানুয়ারি) ওই লিফটে আটকা পড়ে প্রায় ২৪ মিনিট বন্দিদশায় ছিলেন যবিপ্রবির সাবেক ভারপ্রাপ্ত ভিসি ও এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। এরপর আজ সোমবার (২৪ জানুয়ারি) আটকা পড়েন ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্ল্যাসহ যবিপ্রবির আরও বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক।
আরও পড়ুন: দুই দশকে সাত বিশ্ববিদ্যালয় ভিসির পদত্যাগ
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বলেন, সকাল ৮ টা ৩৫ মিনিটে আমি লিফটে উঠেছিলাম। ওঠার শুরুতেই প্রথমে একটি বিকট শব্দ হয়। আমি প্রথমে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আগে একবার বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমি আটকা পড়ি। ভেবেছিলাম আগেরবারের মতো কিছু কিন্তু এইবার এইরকম কিছু ছিল না। সুইচ চাপলেও দরজা খুলেনি, লিফটে তখন তিনতলার রয়েছে বলে দেখাচ্ছিলো। প্রায় ২৪ মিনিট হয়ে গেলেও লিফট চালু হয়নি।
“এরপর আমি ইঞ্জিনিয়ার মিজানকে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে আমি প্রধান প্রকৌশলী আনিসকে ফোনে আমার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাই। এরপর তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেন, আমরা আপনাকে উদ্ধার করার জন্য লোক পাঠাচ্ছি। এরমধ্যে আমি বিভিন্ন জায়গায় কথা বলি কিন্তু কারোর ফোনের কোন রিপ্লাই আসেনি। এসময় আমি উপায় না পেয়ে বর্তমান ভিসি মহোদয়ের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কয়েকবার চেষ্টা করার পর ভিসি ফোন রিসিভ করলে আমি তাকে আমার এই বিপর্যয়ের কথা জানাই।”
আরও পড়ুন: শাবিপ্রবির ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি ডা. জাফরুল্লাহর
অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বলেন, তিনি আমাকে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। এরপর আমি আমার পিওনকে ফোনে আমার অবস্থার কথা জানালে সে দ্রুত মেকানিককে সাথে করে নিয়ে আসে। এসময় লিফটে তিন তলায় অবস্থান দেখালেও তারা আমাকে তিন তালায় খুঁজে পায় না পরবর্তীতে চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় দরজা খুলে তারা আমাকে লিফটের পঞ্চম এবং ষষ্ঠ তলার প্রায় মাঝামাঝি জায়গায় খুঁজে পায়।
তিনি আরও জানান, আমি লিফটের মধ্যে প্রায় ২৪ মিনিট একা একা ছিলাম। আমি আমার চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি। আমার মনে হচ্ছিল বসে পড়ে ঈশ্বরের নাম ডাকি। আমি যখন লিফট থেকে বের হয়েছি আমার মনে হয়েছে আমি যেন এক নতুন জীবন পেয়েছি।
এরকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন যেন আর কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর হতে না হয় কামনা করে তিনি আরও জানান, আমাদের একাডেমিক ভবনের লিফটের সার্ভিস মোটেও সন্তোষজনক না। লিফটে উঠলে প্রায়ই ঝাঁকুনি অনুভব করি।
আরও পড়ুন: বাংলা একাডেমি পুরষ্কার পেলেন চবির সাবেক তিন শিক্ষার্থী
লিফটে আটকা পড়ে যবিপ্রবির ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন ও ইএসটি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্ল্যা বলেন, আমি লিফটের মধ্যে প্রায় ৭-৮ মিনিট আটকে ছিলাম। একজন শিক্ষক হিসেবে আমি যথারীতি ঘাবড়ে যাই। আমার জায়গায় যদি কোন শিক্ষার্থী আটকে পড়তো তাহলে তার মানসিক অবস্থা কেমন হতো? এর আগে আমি কর্তৃপক্ষ বরাবর এই বিষয়ে চিঠি দিয়েছি কিন্তু তারা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা সেটা তারাই ভালো জানে।
ভবিষতে কোন শিক্ষক বা শিক্ষার্থীকে যেন এই ধরণের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, জানতে চাইলে প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী ও ফিশারিজ এন্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনিসুর রহমান বলেন, আমি তো এ বিষয়ে ভালো বুঝি না তবে মেইনটেনেন্স না করার জন্য হয়তো এ সমস্যাগুলো হচ্ছে। কিছু সমস্যার কারণে সিকিউরিটি মানি না দেওয়ায় গত ৩ মাস কেউ মেইনটেনেন্স করতে আসেনি। তবে আজকের মিটিংয়ে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে আশা করি।