২০ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০৭

সাড়ে ৪ বছরের ক্ষোভের বিস্ফোরণেই শাবিপ্রবিতে আন্দোলন-অনশন

সাড়ে ৪ বছরের ক্ষোভের বিস্ফোরণেই শাবিপ্রবিতে আন্দোলন-অনশন
শাবিপ্রবিতে আন্দোলন-অনশন  © সংগৃহীত

প্রথম মেয়াদে ৪ বছর দায়িত্ব পালন শেষে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) দ্বিতীয় মেয়াদে ফের উপাচার্যের দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। দুই মেয়াদের মধ্যে সাড়ে ৪ বছরের দায়িত্ব পালনকালে তিনি যে স্বেচ্ছাচারিতা, একগুঁয়েমি ও বেপরোয়া আচরণ করেছেন; তাই শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন-অনশনকে অনিবার্য করে তুলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় নজিরবিহীনভাবে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অ্যাকশনের ফলে এতদিনের জমাট ক্ষোভ বিস্ফোরিত হয়ে এক দফার উপাচার্য পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে।

এদিকে, এই আন্দোলনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরাল হয়েছে উপাচার্যের একটি অডিও ক্লিপ, যাতে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিয়ে ‘অশালীন মন্তব্য’ করেছেন বলে জানা গেছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসার সুবাদে উপাচার্যের এক ধরনের অহমিকাও রয়েছে।

ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতাও ফেসবুকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের আচরণ নিয়ে সমালোচনা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন ছাত্রলীগের একাধিক নেতা। অবশ্য বর্তমান সরকারের আমলেও তিনি আওয়ামী লীগপন্থী নীল দল থেকে দু’দফা ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ২০১২-১৩ সালে বিভিন্ন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসে ফরিদ উদ্দিনের নাম আসার বিষয়টি নতুন করে উঠে এসেছে। তার বিরুদ্ধে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নতুন নিয়োগে আঞ্চলিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের অনেকে প্রকাশ্যে উপাচার্যের সমালোচনা করছেন। সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সাঈদ আকন্দ ফেসবুকে তাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সাজেদুল ইসলাম সবুজ, শাবির সৈয়দ জুয়েম, মাহবুবুর রহমানসহ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অনেক সাবেক নেতাকর্মীই উপাচার্যের কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

২০১৭ সালের আগস্টে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যে ইমেজ গড়ে তুলেছিলেন, তাতে এমন সংহত ও শক্তিশালী আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও অপ্রত্যাশিত ছিল। অতীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে যুক্ত ছিলেন, এমন এক শিক্ষক বলেন, ফরিদ উদ্দিন এখানে এসে নিজের চারপাশে অন্যরকম একটি বলয় গড়ে তোলেন। এখানকার শিক্ষকদেরও তিনি এক ধরনের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ‘আলাদা সম্পর্কের’ কথাও প্রচার করেন তিনি। এসব আন্দোলনে তার কিছু হবে না- এমন প্রচারও রয়েছে তার পক্ষাবলম্বনকারীদের।

গত বৃহস্পতিবার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমদ লিজার পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। গত রবিবার পুলিশি অ্যাকশনের পর তা উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। গতকাল বুধবার দুপুরের পর তার পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোজাম্মেল হক ও সমাজকর্ম বিভাগের দীপান্বিতা বৃষ্টি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

চলমান আন্দোলনের প্রথমদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগও উঠেছিল। তবে এ আন্দোলনে ছাত্রলীগের কর্মীদের অনেকে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

শাবিপ্রবির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, ফরিদ উদ্দিন কুমিল্লা জেলার শিক্ষকদের বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন। গতকাল বুধবার স্থগিত হওয়া সিন্ডিকেট নির্বাচনেও তিনি পছন্দের বলয়ের শিক্ষকদের বিজয়ী করতে তৎপর ছিলেন।

গতকাল সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের স্লোগানে শিক্ষকদের সম্পর্কে অশোভন আচরণের অভিযোগে কয়েকজন শিক্ষকের অবস্থান কর্মসূচির নেপথ্যেও উপাচার্যের ইন্ধনের অভিযোগ রয়েছে। এ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের মন্তব্যের সমালোচনায় অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুনের বক্তব্য নিয়েও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

এদিকে বর্তমান সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কোনো অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস।