শাবিপ্রবিতে বিক্ষোভ-আন্দোলনের শুরু যেভাবে, যে কারণে

শাবিপ্রবিতে আন্দোলন
শাবিপ্রবিতে আন্দোলন  © সংগৃহীত

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আজ মঙ্গলবারও ক্যাম্পাসে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রী হলের শিক্ষার্থীদের কিছু দাবির বিষয়ে সাড়া দিতে কর্তৃপক্ষের কালক্ষেপণ করায় এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। তবে এই আন্দোলনের পেছনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির ভূমিকাও রয়েছে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার শাবিপ্রবির সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমদ লিজার অসদাচরণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। পরদিন শুক্রবার থেকে ছাত্রীরা প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা আন্দোলন শুরু করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথম দিকে তা গুরুত্ব দেয়নি। এ নিয়ে আল্টিমেটাম দিয়েও কাজ না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। গত রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে আরও বড় অসন্তোষের জন্ম দেয়। পরবর্তীতে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণের দাবি ওঠে।

এই ঘটনার পর ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হলে ওইদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। গতকাল সোমবার দুপুরের মধ্যে সবাইকে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও কার্যত তা মানেননি শিক্ষার্থীরা। উল্টো তা উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।

এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দাবি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পরও যারা আন্দোলনের নামে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে, তাদের অনেকে বহিরাগত। তবে উপাচার্য মিথ্যাচার করছেন অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তার নির্দেশে পুলিশ হামলা, গুলিবর্ষণ করেছে।

এই ঘটনার শুরু থেকেই আন্দোলনরত সিরাজুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতাসহ নানাভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস। তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গিয়েছিল। রবিবার কোষাধ্যক্ষ যখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন, তখন হঠাৎ করে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। কেন এমন হয়েছে, তা হয়তো প্রশাসন বলতে পারবে।

টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়ার পর ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে একটি পক্ষের ‘ইন্ধন’ রয়েছে বলে তার আস্থাভাজন শিক্ষকদের অভিযোগ রয়েছে। একটি হলের সমস্যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এতদূর গড়িয়েছে, যা মোটেও স্বাভাবিক নয় বলে দাবি করেন তারা। প্রথম থেকে সমস্যা সমাধানে সম্পৃক্ত একজন শিক্ষক বলেন, সাদা চোখে যেমন মনে হচ্ছে, তা নয়। শিক্ষার্থীরা সহিংস ছিল না। সমাধানের একদম প্রান্তে এসে সবকিছু আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। যে ১১ জন শিক্ষার্থী আলোচনায় বসেছিল, তারা সন্তুষ্ট হয়েই ফিরেছিল।

আগামী মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচন সামনে রেখে শিক্ষকদের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে রেষারেষি চলছে বলে সূত্র জানিয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাত্রী হলের সমস্যাকে বাইরে আনার নেপথ্যে কতিপয় শিক্ষকের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক রাজনীতির প্রভাব শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পড়ার কথা বলেছেন কেউ কেউ।

একাধিক শিক্ষক বলেছেন, সিরাজুন্নেসা হল ইস্যুতে আলোচনা দীর্ঘায়িত হয়েছে, তাতে অস্থিরতা বেড়েছে। এক্ষেত্রে উপাচার্য সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন তারা। প্রথম দিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে উপাচার্যের অবহেলার পাশাপাশি শিক্ষকদের একাংশ তাকে ভুল বুঝিয়েছেন বলে বেশ কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেছেন।

পুরো ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক ও দুঃখজনক’ আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী-বামপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দের সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, যেভাবে ঘটেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এই তদন্ত শুধু নামে হলে হবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ সমুন্নত রাখে- এমন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। 

বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মূল্যবোধে শ্রদ্ধাশীল শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকেও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি উঠেছে। এই ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মো. সাজেদুল করিম বলেন, একটি হলের সমস্যা নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এখানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, সাউন্ড গ্রেনেড, গুলির অভিযোগও রয়েছে। খুবই অবাক করা বিষয়। এমন ঘটনা ঘটবে বলে কখনও কল্পনা করিনি।

এদিকে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখতে গণিত বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ তালুকদারকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।


সর্বশেষ সংবাদ