রাষ্ট্রপতিকে দেয়া চিঠিতে যা বলেছেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য মো. আবদুল হামিদকে খোলা চিঠি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ভিসি হিসেবে সৎ ও যোগ্য একজনকে নিয়োগ দেয়ার অনুরোধও করেন তারা।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় ভিসির বাসার সামনে থেকে রাষ্ট্রপতিকে দেয়া চিঠি পড়ে শোনান আন্দোলনকারীরা।
খোলা চিঠিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেশের কল্যাণে নিজেদের প্রস্তুত করার উদ্দেশ্যে অধ্যয়নে নিবেদিত রয়েছে। রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া ভবনের সামনে ৩ দফা দাবিতে আন্দোলনরত বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের ছাত্রী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বিনা উস্কানিতে সুপরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশের নিষ্ঠুর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বাংলাদেশের জনগণের টাকায় ক্রয়কৃত আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত পুলিশের নির্বিচার লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেণেডের শিকার হয় নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা। এতে গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ২০ এর বেশি। এর মধ্যে কারো মাথা ফেটেছে, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেণেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড জখম হয়ে মারাত্মক আহত হয়েছে অনেকে।
আরও পড়ুন- রাতভর আন্দোলন শাবিপ্রবিতে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস আন্দোলনকারীদের
চিঠিতে আরও বলা হয়, ছাত্রীদের ওপর অসম্ভব নিষ্ঠুরভাবে পুরুষ পুলিশ সদস্যরা মুহুর্মুহু লাঠিচার্জ করেছে। ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক পুলিশ ডেকে এনে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন নৃশংস হামলার ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন। দাবি না মেনে উল্টো পুলিশী হামলায় শিক্ষার্থীদের মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলার ঘটনায় ভিসি যেভাবে মূল কুশীলবের ভূমিকা পালন করেছেন তা সরাসরি সংবিধান বিরোধী এবং আপনার ( মহামান্য রাষ্ট্রপতি) কর্তৃক জনাব ফরিদ উদ্দিন আহমদের ওপর অর্পিত দায়িত্বের সরাসরি বরখেলাপ। এ ঘটনায় শাবিপ্রবির সাবেক ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থী হতবাক এবং সংক্ষুব্ধ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে আমাদের মহামান্য আচার্য তার জীবন অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বুঝতে পারেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ, দশ ও নিজেদের ভালমন্দ অনুধাবন করার সক্ষমতা রাখি। আজ এটা দিনের মত পরিষ্কার যে আপনার প্রতিনিধি হিসেবে ফরিদ উদ্দিন আহমদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির দায়িত্ব পালনের সকল নৈতিক, যৌক্তিক ও সাংবিধানিক যোগ্যতা হারিয়েছেন। এ ঘটনা আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে এই অথর্ব, অযোগ্য ও স্বৈরাচারী ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী ক্ষমতায় বহাল রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূলমন্ত্রের পরিপন্থি। বর্তমানে কোনো শিক্ষার্থীই এই ভিসির দায়িত্বে থাকাকালে ক্যাম্পাসে নিরাপদ বোধ করছে না।
খোলা চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে গতদিনের হামলার পর আজ সারাদিন ক্যাম্পাসে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে জলকামান ও রায়টকারসহ পুলিশের উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা আমাদের মহামান্য আচার্যের কাছে আবেদন করছি অবিলম্বে ক্যাম্পাসে মোতায়েনকৃত অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়ে আমাদের নিরাপত্তা বিধান করুন।
আরও পড়ুন- শাবিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর টিম
এতে উল্লেখ করা হয়, শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা ভিসির পদ থেকে গতকালের হামলার মূল মদদদাতা ফরিদ উদ্দিন আহমদের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করে তাকে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবে মহামান্য আচার্যের কাছে আমাদের আবেদন, আপনার সরাসরি হস্তক্ষেপে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসির পদত্যাগ নিশ্চিত করে একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিকে ভিসি হিসেবে অতিসত্ত্বর নিয়োগ দিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে উদ্যোগ নিন।