ছাত্রলীগের সুপারিশ ছাড়া হলে উঠতে পারেন না ছাত্ররা
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আবাসিক হলগুলোর ৮০ শতাংশ সিট ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। মিছিলে যাওয়ার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসব সিট বিলিবণ্টন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কোনো সিটে ছাত্র ওঠাতে হলে ছাত্রনেতাদের কাছে সুপারিশ পাঠায় বলে জানা গেছে।
শাবিপ্রবি ছাত্রদের জন্য তিনটি আবাসিক হলে মোট সিট সংখ্যা ১ হাজার ২৩টি। যেগুলোতে মেধা কিংবা কোনো নীতিমালার ভিত্তিতে নয় ছাত্রলীগের নেতারাই ঠিক করে দেন কে, কখন, কোন সিটে উঠবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনটি হলের ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশ সিটই ছাত্রলীগের কয়েকটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আছে। সব মিলিয়ে ৯৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ সিটই বিভিন্ন সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে। এর বাইরে বাকি ৩ দশমিক ৪২ শতাংশ সিটের নিয়ন্ত্রণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের হাতে।
আরও পড়ুনঃ শাবি ছাত্রীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলা
সাধারণ শিক্ষার্থী হয়ে অরাজনৈতিকভাবে হলে উঠতে পারছেন না, এমন ১২ জন শিক্ষার্থী এক গণমাধ্যমকে তাদের অভিযোগ জানিয়ে বলেছে, হলে উঠতে হলে ছাত্রনেতাদের দ্বারস্থ হতে হয়। তাদের মিছিল-সমাবেশে যাওয়ার শর্ত সাপেক্ষে হলে সিট পাওয়া যায়। এর বাইরে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাত্রনেতাদের টাকা দিয়েও হলে সিট পাওয়া যায়। তবে হলে সিট পেলেও কখনোই ছাত্রনেতাদের নির্দেশ কিংবা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া যায় না।
তবে শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, একটা সময় ছাত্রলীগ কিংবা অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতাদের দখলে হলের সিটগুলো ছিল। এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতি এখন নেই। যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতেই ছাত্ররা হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছে। হলে উঠতে ছাত্রনেতাদের দ্বারস্থ হতে হয়, এমন অভিযোগ সত্য নয়। এরপরও অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
একাধিক ছাত্রনেতা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির আগে থেকেই হলের সিটগুলো প্রভাবশালী ছাত্রনেতাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। নতুনভাবে হল চালু হওয়ার পর যেসব সিট ফাঁকা হয়েছে, সেসবও তারা সমঝোতার ভিত্তিতে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদের তিনটি হলের মধ্যে শাহপরান হলে ৪৪৭টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ৫০৮টি এবং সৈয়দ মুজতবা আলী হলে ৬৮টি সিট আছে। এর মধ্যে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ইমরান আহমদ চৌধুরীর গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ১৮০টি; সাবেক পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক খলিলুর রহমানের গ্রুপের ১২০টি; ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আশরাফ কামাল আরিফ নিয়ন্ত্রিত ‘কাশ্মীর গ্রুপের’ ১৩০টি এবং ছাত্রলীগ নেতা ছাব্বির হোসেন নিয়ন্ত্রিত হাফিজ গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আছে ১৪৮টি সিট।
যোগাযোগ করা হলে সিটের নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের নেতারা বলেন, নিজেদের অনুসারী বাড়াতে সিটগুলোতে ছাত্রদের থাকার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়। ইমরান আহমদ চৌধুরী দাবি করেছেন, বৈধভাবেই শিক্ষার্থীরা হলে ওঠেন। হলে ওঠার পরই তারা বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছাত্ররাজনীতিতে জড়ান। এমন পরিসংখ্যান ধরেই মূলত বলা হয়, কোন পক্ষের কতজন অনুসারী হলে থাকেন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাজু শেখ বলেন, ‘আমাদের নামে হলে আলাদাভাবে কোনো সিট বরাদ্দ নেই। সাধারণ বৈধ শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের সংগঠনের কয়েকজন থাকেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের প্রাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মোহাম্মদ সামিউল ইসলাম এবং সৈয়দ আলী মুজতবা আলী হলের প্রাধ্যক্ষ আরেফিন নোবেল এক গণমাধ্যমকে জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। পুনরায় হল চালু হওয়ার পর বৈধ শিক্ষার্থীদের কেবল হলে উঠতে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রত্ব শেষ, এমন কোনো শিক্ষার্থীকে হলে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। ছাত্রনেতারা নন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনই ছাত্রদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে সিট বরাদ্দ দিয়ে থাকে বলে প্রাধ্যক্ষরা দাবি করেছেন।