পরিবহন প্রশাসকের গড়িমসি, ভোগান্তির শিকার যবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পরিবহন প্রশাসকের গড়িমসির কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বাস থাকা সত্বেও শিক্ষার্থীদের জন্য কম সংখ্যক বাস দেওয়া, বাসের শিডিউল বিপর্যয়, পরিবহনের যান্ত্রিক ত্রুটির সমস্যা সমাধানে অজুহাত দেখিয়ে দায় সারছেন বেশিরভাগ সময়। বার বার শিক্ষার্থীদের অভিযোগে সাময়িক সমাধান হলেও দু-একদিন পরে আবার পূর্বের অনিয়মকে নিয়ম বানিয়ে চলছে যবিপ্রবির পরিবহন পুল। পরিবহন প্রশাসকের উপর এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে খোদ পরিবহন দপ্তরের কর্মচারীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পরিবহন কম দেওয়ার কারণে ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত শিক্ষার্থীর চাপে স্বাস্থ্যবিধি মানতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। এতে করে প্রতিনিয়তই দাঁড়িয়ে ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এদিকে অনেক দিন ধরে মেরামত জন্য পরে আছে শিক্ষার্থী সিঙ্গেল বাসসহ শিক্ষকদের মাইক্রোবাস, এই নিয়ে উদাসীন পরিবহন প্রশাসন ।
যবিপ্রবির সকল বিভাগের পরীক্ষা গত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অনেক বিভাগে চলছে পরীক্ষা, ল্যাব, ভাইবাসহ থিসিসের কাজ। পরিবহন প্রশাসনের দেওয়া শিডিউল অনুযায়ী সকাল ৮টা ৫০ মিনিট ও দুপুর ১২টায় শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের বাবস্থা থাকলেও আজ দুপুর ১২টায় বাস ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে আসেনি বলে জানা যায়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ে ল্যাব, ভাইবাসহ থিসিসের কাজে ক্যাম্পাসে আসা অনেক শিক্ষার্থী। এছাড়াও প্রতিনিয়ত বিকাল ৫টায় বাসে রীতিমত দাঁড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রমতে, বর্তমানে যবিপ্রবির পরিবহন পুলে রয়েছে ৬টি দ্বিতল ও ৬ টি সিঙ্গেল বাস যা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফদের শহরের বিভিন্ন স্থান হতে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের কাজে ব্যবহৃত হয়। এরমধ্যে ৩টি সিঙ্গেল বাস প্রতিনিয়ত কালীগঞ্জ, খাজুরা ও মনিরামপুর তিনটি আলাদা রুটে যায়। মেরামতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় বিকল অবস্থায় প্রায় ২০/২৫ দিন ধরে পরে আছে একটি সিঙ্গেল বাস। শিক্ষকদের একটি মাইক্রোবাস বিকল হয়ে আছে ৪/৫ দিন ধরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন কর্মচারী বলেন, পরিবহনের সমস্যার বিষয়ে পরিবহন প্রশাসকে একাধিক বার জানানো হলেও তিনি কোনো সুরাহা করেননি । সমাধান চাইলে তিনি টাকা সংকট সহ নানা অজুহাত দেখিয়ে তিনি এড়িয়ে যান। তিনি আরও বলেন , আমাদের বাসগুলোর ইঞ্জিনওয়েল ৫০০০ কিলোমিটার চালানোর পর পরিবর্তন করতে হয়, কিন্তু ৭০০০ কিলোমিটার হয়ে যাওয়ার পরেও এখনো ইঞ্জিনওয়েল পরিবর্তন করা হয়নি, নতুন বাসগুলোর পাতিসেট কেনার কথা থাকলেও কেনা হয়নি, কয়েকটি বাসের হুইপারের মোটরও নেই।
পরিবহন সমস্যা নিয়ে আক্তারুল ইসলাম নামের একজন শিক্ষার্থী বলেন , প্রায় প্রতিদিনই ৫টার বাসে আমাদের দাঁড়িয়ে যেতে হয় । গতদিন জায়গার সংকটে স্টাফদের বাসে কয়েকজনকে যেতে হয়েছে। আমারা একাধিকবার এই নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছি তবে পর্যাপ্ত বাস থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে ।
সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রধান পরিবহন প্রশাসক প্রফেসর ড. মোঃ জাফিরুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি ঢাকায় ছুটিতে আছি, এই বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহন দপ্তরে যোগাযোগ করুন”।
পরবর্তীতে সহকারী পরিবহন প্রশাসক মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর আলম কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, দুপুর ১২টায় বাস শুধুমাত্র যেদিন বিকালে পরীক্ষা থাকে ওইদিন চলাচল করে। আজ বিকালে কোন বিভাগে পরীক্ষা ছিল সেই জন্য বাস যায়নি। আমাদের শিক্ষকদের যে গাড়িটির সমস্যা ছিল তার প্রয়োজনীয় পার্টসগুলো আমরা সংগ্রহ করেছি, দুই-একদিনের মধ্যে মাইক্রোবাসটি চলাচল উপযোগী হয়ে যাবে। সিঙ্গেল বাসের সমস্যা ও যন্ত্রাংশের বিষয়ে প্রধান পরিবহন প্রশাসক জাফিরুল ইসলাম স্যার ও কর্মকর্তা শাহেদ রেজা ভাল বলতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা ইতিমধ্যে মিটিং করেছি । খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা প্রয়োজনীয় বাবস্থা গ্রহন করে সমস্যাগুলো সমাধান করব।